অনুবাদ কবিতা অনুবাদ কবিতা

অনুবাদ কবিতা অনুবাদ কবিতা

Size

Read more

 


অনুবাদ কবিতা অনুবাদ কবিতা

প্রণয়পাবলো নেরুদা

তোমার প্রসঙ্গ উঠে আসে, পুষ্প-ফোটা উদ্যানে উদ্যানে
আমি তো আহত হই, বসন্তের সুমিষ্ট সুবাসে।
আমি তো গিয়েছি ভুলে ওই মুখ, আজ আর স্মরণে আসে না
সেই হাত দুটি; কীভাবে দুটি ঠোঁট
আমাকে গিলেছে, নেই মনে।
মন গেছে তোমারই তো দিকে, ভালোবাসি শাদা শাদা পাষাণ মূর্তিকে
উদ্যানে মলিন হয়ে আছে যারা, ওইসব শাদামূর্তি
যাদের দৃষ্টিও নেই, বাকশক্তি নেই।
ভুলে গেছি তোমার কণ্ঠস্বর, আনন্দিত সেই সব ধ্বনি;
ভুলে গেছি ওই দুটি চোখ।
পুষ্প যেমন বাঁধা আঘ্রাণের সাথে,বাঁধা পড়ে আছি আমি
তোমারই তো অস্পষ্ট স্মৃতির ভেতরে। শুধু এক জখমের
যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে বাঁচি; স্পর্শ করো না এতো তাড়াতাড়ি,
অনারোগ্য হতে পারে এই টাটকা ক্ষতটি আমার।
তোমার সুশ্রুষাগুলো আমার সমগ্র দেবে মেলে, যেরকম
মলিন করুণ সব দেয়ালে দেয়ালে, বেয়ে ওঠে দ্রাক্ষালতাগুলি।
তোমার প্রণয় আমি বিস্মৃত হয়েছি, আজও তবু
প্রতিটি জানালাজুড়ে চোখে ভাসে তোমারই তো সেই প্রিয় মুখ।
তোমারই কারণে, এই আসন্ন গ্রীষ্মের যত সুবাস মদিরা
আমাকে যন্ত্রণা দেয়; তোমারই কারণে আমি পুনরায়
পতিত প্রত্যাশা-চিহ্নে খুঁজে ফিরে আশার আলোক :
নিক্ষিপ্ত তারকারাজি, বিক্ষিপ্তও পতন্মোখ যত বস্তুনিচয়
সব ঘেঁটে, তোমারই অস্তিত্ব খুঁজেফিরি।

সকালপাবলো নেরুদা

একদম উদোম, তুমি তোমার হাতের মতন সাধারন
তুলতুলে, সাদামাটা, ছোট্ট, স্বচ্ছ, গোলগাল,
চাদের আলোতে, আপেল বাগানেঃ
একদম উদোম, গমের দানার মত একহারা
একদম উদোম, তুমি কিউবার রাতের মত নিল
চুলজুড়ে আঙ্গুর আর তারাদের ভিড়
বেশ খোলামেলা আর হলুদাভ
গির্জার সোনালি গম্বুজ য্যমনটা গরমকালের আচ
একদম উদোম, তুমি তোমার নখের মতই ছোট্ট-
বাকানো, সুক্ষ, গোলাপি, দিনের আলোর জন্ম লো মাত্র
আর তুমি নিজেকে সরিয়ে নিলে পাতালে
কাপড় চোপড়ে ঢাকা এক সুড়ংগপথে
তোমার টলটলে আলো পোষাক পরছে-পাতা ঝরছে-
আবার হয়ে উঠছে উদোম একটা সাধারন হাত

দুপুরের বুকে ঝুকেপাবলো নেরুদা

দুপুরের বুকে ঝুকে পড়ে বিষন্নতার জাল ছুড়েছিলাম
তোমার সাগর-নিল চোখের জলে
ওখানে গনগনে হলকায় আমার একাকিত্ত্ব বাড়ে
ডুবন্তের হাত তড়পায় বানের জলের তোড়ে
তোমার অন্যমনস্ক চোখে আমি লাল সংকেত পাঠিয়েছি
চাহনি দুলেছিল সাগরবেলাতে দাঁড়ানো বাতিঘরে
দুরের নারি তুমি কেবল অন্ধকার ধরো
শঙ্কাপারে আশঙ্কা থরো থরো
দুপুরের বুকে ঝুকে বিশ্ননতার জাল ছুড়েছিলাম
সেই সাগরে আছড়ে পড়ে তোমারই সাগর-নিল চোখ
তোমার সাথে সঙ্গম
অনেকটা রাতচরা পাখিদের দানা খুটে খুটে খাওয়া
রাত সওয়ার এখন ছায়াবতি ঘোড়ার জিনে
রাত মাটিতে বুনেছে রাতের নিল টাসেল

এঞ্জেলাপাবলো নেরুদা

আজকে শুয়েছিলাম এক খাটি তরুনির পাশে
সাদা সাগরের তিরে জ্বলন্ত তারাদের ঠিক মাঝখানে
সব ঘটছিল খুব আস্তে আস্তে
টানা সবুজ চাহনিতে
ঝলসানো আলোতে শুকনো পানির দাগ
টলটলে গভির গোল্লাছুটের তিব্র আর তাজা আবেগ
বুকের বোটায় দুটি দুমুখি মশাল
জ্বলছে খাড়া দুই দুটি অঞ্চলেঃ
জ্বলতে জ্বলতে গলেছিল নদিপথে
পরিস্কার পায়ের পাতায়
মৌসুমি বাতাসে সবে ফলন ধরেছে
শরিরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা
নিজেকে ভরে তুলেছে গাছপাকা ফলে
গোপন অনলে

মাতাল মাছকন্যাপাবলো নেরুদা

এক্কেবারে নেংটো মেয়েটি ঢোকবার সময়
পানাশালাত বেশ জন জোয়ান মর্দ বসে বসে পান করছিল।
পান করতে করতে,ওরা মেয়েটির দিকে
থু থু থুকরে থুতু ছিটাচ্ছিল।
সবে সাগর থেকে উঠে আসা মেয়েটি
এসবের কিছুই বুঝতে পারছিল না।
মেয়েটি পথ হারানো মাছকন্যা
টিটকারি থু থুক্কার জ্বলজ্বলে মাংশ ছুয়ে
পিছলে পিছলে খসে পড়ছিল।
খিস্তি খেউড়ে ওর সোনালি দুধের মাই ঝলাসাচ্ছিল।
কাদতে জানেনা বলে মাছকন্যা কাদে নি।
কাপড় চেনেনা বলে মাছকন্যা পোষাক পরেনি।
জ্বলন্ত সিগারেট ওরা মাছকন্যার গায়ে ঠেশে ধরছিল।
শব্দ অপরিচিত বলে চিতকার করনি।
দুরের ভালবাশার রঙ্গে ওর চোখ তবূও রঙ্গিন,
ওর হাতগুলো মনকা পাথরে জ্বল জ্বল,
প্রবালের আলোতে ওর ঠোট নড়ছিল,
শেষমেশ মেয়েটি অবশ্য বেরোতে পেরেছিল।
যে-নদি থেকে এসেছিল
সে-নদিতে ফেরা মাত্র মাছকন্যা আবার পরিস্কার,
আবার বৃষ্টি ধোয়া সাদা মার্বেলে টলটলে।
একবারও পিছে না ফিরে সাতরে গিয়েছিল
শুন্যতার দিকে, নিজের মরনের দিকে।

কবিতাপাবলো নেরুদা

এবং বয়সটাতেকবিতা এসেছিল
আমার খোজে।আমি জানতাম না,
জানতাম না কোথ্যেকে,
শিতকাল না কি নদি থেকে,
কিভাবে কখন জানতে পারি নি,
না, কোনরকম শব্দও শুনিনি,
নিশব্দও না,
কিন্তু রাস্তা থেকে আমাকে ডেকেছিল,
পুড়তে পুড়তে,
ভয়ঙ্কর আগুনের হলকায় হুটোপুটি করতে করতে,
রাতের ডালপালারা ডেকেছিল ইশারায়ঃ
ভিড় থেকে দুরে সরে যেতে বলেছিল
আমার তখন কোন চেহারাই ছিলনা
কিন্তু কবিতা ঠিক ঠিক আমার
চেহারাকেই ছুয়েছিল
জানতাম না ঠিক কি বলতে হবে,
আমার মুখে নাম ধাম তেমন আসেনা,
চোখ তখন অন্ধ,
ভেতরে কেমন একটা তোলপাড়,
জ়্বর জ্বর ভাব য্যনো পথ হারানো ডানা-ভাঙ্গা পাখি,
কিন্তু ঠিকই পথ বের করে ফেলেছিলাম
ভয়ঙ্কর আগুনের গোপন সংকেতের পাঠ শিখে নিয়েছিলাম,
প্রথম অস্পষ্ট লাইনটি হুট করেই চলে এসেছিল,
অস্পষ্ট , বড় কোন অর্থ নেই, কিন্তু খাটি,
আগামাথা নেই, বকুনি,
কিন্তু নির্ভেজাল জ্বান,
অগ্বানের গ্বান আর কি
হঠাত স্বর্গ দেখে ফেলেছিলাম,
স্বর্গের দুয়ার খুলছে
আর বন্ধ হচ্ছে
তারারা পিট পিট করছে
ছায়ারা ছিড়ছে খুড়ছে
ছায়াতে, তারাতে
তির ধনুকে, আগুন এবং ফুলদের ধাধা,
রাত আর পৃথিবি এলানো বিশ্রামে।
এবং আমার অস্তিত্বের শেষ নেই,
মহান তারাদের শুন্যতায়
মাতাল,রহস্যের ছবি ছায়ায়
নিখোজ নিজের ভেতরের গোলক ধাধায়
কিন্তু খাটি
বাদলা বাতাসে তারাদের মেলায়

নেংটো সুন্দরির বন্দনায়পাবলো নেরুদা

খাস কলিজায়
পাক সাফ চোখে
আমি তোমার সৌন্দর্জ উদজাপন করি
অঝরে ঝরা রক্তপাত ধরে রাখি
যাতে তা লাগাম পরাতে পারে
আমার কবিতায় শোয়া
তোমার শরিরের বাকে
জংগল ঘেরা জমিতে
অথবা সমুদ্রে সার্ফিংঃ
সুগন্ধি ফেনায়
সাগরের বাজনায়।
নেংটো সুন্দরিঃ
সমান তালে তালে সুন্দর
তোমার পায়ের পাতা
প্রাচিন বাতাস আর শব্দের
কারুকাজ আঙ্গুলের ভাজেঃ
কানের লতি
আমেরিকান সাগর সেচা
ছোট ছোট শামুকের খোল;
পুরুষ্ঠ বুক জোড়ায়
জ্যন্ত জ্যন্ত আলোর কলরোল
উড়ন্ত
পাপড়িরা
খুলছে
আর ঢাকছে
চোখের দুই গভির মহাদেশ
তোমার ঘাড়ের বাক
যেখানে দুভাগে হারিয়েছে
ধুসর পায়ের চামড়ায়
সেখানেই গলেছে
মাঝখানে সমান করে কাটা
আপেলের জমকালো দুটি টুকরো,
তোমার সৌন্দর্জ দুভাগে নেমে যায়
সোনায় মোড়ানো দুটি থাম্বায়-
আমরা যাদের বলি রান বা উরু
ধিরে ধিরে ডূবে যায়
আঙ্গুরের থোকায় ঢাকা
পায়ের পাতায়,
ওখানে তোমার জমজ গাছ
আবার পোড়ে এবং আবারো ওড়েঃ
আগুন ঝরায়, ঝাড়বাতি দোলায়,
গাছপাকা ফল
সাগরের সাথে পৃথিবির
মিতালি পাতায়
কি খনিজে, কি ভেষজে
তৈরি তোমার দেহা-
মনকা পাথরে, সোলেমানি আকিকে,
সিলিকা বালুকনায়, গমের একহারা দানায়,
তান্দুরিতে ফুলে ওঠা পাউরুটি
সংকেত পাঠাচ্ছে
রুপালি
পাহাড়কে,
মিষ্টি ফলের ভেতর
নরম মখমল,
ততক্ষন হাশফাশ
যতক্ষন আশ
তুলতুলে আর পেটোয়া
নারির গড়ন?
শুধুমাত্র আলোই
পৃথিবিতে ঝরে না,
তোমার দেহের ভেতর ছড়াচ্ছে
দম আটকানো তুষার
ধরেই নিয়েছে ওরা
ভিতর বাড়িতে তুমি পুড়ে খাক
বাহির বাড়িতে চামড়ার ভাজে ভাজে চাদের সর্বনাশ

সবচেদুখের কবিতাপাবলোনেরুদা

আমি আজ রাতে সবচেদুখের কবিতা লিখতে পারি।
লিখতেই পারি (যেন মনে করো): “হাজার তারার মেলা,
রাতের আকাশে, নীলচে তারারা মিটিমিটি জ্বলে দূরে।
রাতজাগা হাওয়া হারায় আকাশে ঘুমমাখা গান গেয়ে
আমি আজ রাতে সবচেদুখের কবিতা লিখতে পারি।
ভালোবেসেছিল এই মন তাকে, মাঝে মাঝে সেও মোরে।
এমন অনেক আনমনা রাতে তাকে দুই হাতে ধরে
ভরিয়ে দিয়েছি চুম্বনে এই অসীম আকাশ নীচে।
সে আমাকে যত ভালোবেসেছিল, আমিও বেসেছি তাকে।
তার টানা ঘন দীঘি চোখ দেখে কে না ভালোবেসে থাকে?
সে আর আমার নেই, আমি তাকে হারিয়েছিএটা ভেবে
আমি আজ রাতে সবচেদুখের কবিতা লিখতে পারি
বিশাল শুন্য এই রাত তাকে ছাড়া বয়ে চলে ধীরে।
আর কবিতারা ঘাসের শিশিরে এই রাতেঝরে পড়ে।
ভালোবাসা তাকে রাখতে পারেনি এতে আসে যায় কিছু?
রাতের আকাশ তারায় ভরেছে, নেই সে আমার কাছে।
এই তো সবটা। গান ভেসে আসে, গান গায় কেউ দূরে
আমার স্বত্ত্বা নিজেকে হারায় তাকে ছাড়া, তাকে ছাড়া।
তার কাছে যেতে আমার দৃষ্টি খুঁজেখুঁজে ফিরে তাকে
আমার হৃদয় খুঁজে ফিরে তাকে, যে নেই আমার সাথে।
সেই রাত, সেই রাতসাদা গাছ মনে পড়েযায় যেই,
সেই মোরা, যারা আমরা ছিলাম, আর যেআমরা নেই।
আমি তাকে আর ভালো তো বাসি না, কিন্তু বেসেছি এত
আমার কন্ঠ বাতাসের বুক চেপে তার কানে যেত।
অন্য কারুর হবে সে- যে ছিল আমার ঠোঁটের সখা,
কন্ঠের সুর, দুধরাঙা দেহ, অতল চোখের দেখা।
আমি তাকে ভালোবাসি না, সত্য, কিন্তু হয়তো বাসি।
ভালোবাসা খুব কম সময়ের, ভুলে যাওয়া খুব বেশি।
আমার স্বত্ত্বা হারিয়েছে তাকে, নিজেই হারিয়ে গেছে,
কারণ এমন অনেক রাতেই সে ছিল হৃদয়পাশে।
যদিও এটাই ছিল তার দেওয়া বেদনা আমাকে শেষে,
এটাই আমার শেষের কবিতা জেনো তার উদ্দেশে।

0 Reviews