Read more
বিরহ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (অনুপমার প্রেম-পর্ব-১)
একাদশবর্ষ
বয়ঃক্রমের মধ্যে অনুপমা নবেল পড়িয়া পড়িয়া মাথাটা একেবারে বিগড়াইয়া ফেলিয়াছে। সে মনে করিল,
মনুষ্য-হৃদয়ে যত প্রেম, যত
মাধুরী, যত শোভা, যত
সৌন্দর্য, যত তৃষ্ণা আছে,
সব খুঁটিয়া বাছিয়া একত্রিত করিয়া নিজের মস্তিষ্কের ভিতর জমা করিয়া ফেলিয়াছে; মনুষ্য-স্বভাব, মনুষ্য-চরিত্র তাহার নখদর্পণ হইয়াছে। জগতের শিখিবার পদার্থ আর তাহার কিছুই
নাই; সব জানিয়া ফেলিয়াছে,
সব শিখিয়া ফেলিয়াছে। সতীত্বের জ্যোতি সে যেমন দেখিতে
পায়, প্রণয়ের মহিমা সে যেমন বুঝিতে
পারে, জগতে আর যে কেহ
তেমন সমঝদার আছে, অনুপমা তাহা কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারে না।
অনু
ভাবিল, সে একটি মাধবীলতা;
সম্প্রতি মঞ্জরিয়া উঠিতেছে, এ অবস্থায় আশু
সহকার-শাখা-বেষ্টিতা না হইলে, ফোট
ফোট কুঁড়িগুলি কিছুতেই পূর্ণ বিকশিত হইতে পারিবে না। তাই খুঁজিয়া পাতিয়া একটি নবীনকান্তি-সহকার মনোনীত করিয়া লইল এবং দুই-চারি দিবসেই তাহাকে মন-প্রাণ জীবন-যৌবন সব দিয়া ফেলিল।
মনে মনে মন দিবার বা
নিবার সকলেরই সমান অধিকার, কিন্তু জড়াইয়া ধরিবার পূর্বে সহকারটার মতামতেরও ইষৎ প্রয়োজন হয়। এইখানেই মাধবীলতা কিছু বিপদে পড়িয়া গেল। নবীন নীরোদকান্তকে সে কেমন করিয়া
জানাইবে যে, সে তাহার মাধবীলতা—স্ফুটনোন্মুখ হইয়া দাঁড়াইয়া আছে; তাহাকে আশ্রয় না দিলে এখনই
কুঁড়ির ফুল লইয়া মাটিতে লুটাইতে লুটাইতে প্রাণত্যাগ করিবে।
কিন্তু
সহকার এত জানিতে পারিল
না। না জানুক, অনুপমার
প্রেম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। অমৃতে গরল, সুখে দুঃখ, প্রণয়ে বিচ্ছেদ চিরপ্রসিদ্ধ। দুই-চারি দিবসে অনুপমা বিরহ-ব্যথায় জর্জরিত-তনু হইয়া মনে মনে বলিল, স্বামিন্ তুমি আমাকে লও বা না
লও, ফিরিয়া চাহ বা না চাহ,
আমি তোমার চিরদাসী। প্রাণ যায় তাহাও স্বীকার, কিন্তু তোমাকে কিছুতেই ছাড়িব না। এ জন্মে না
পাই, আর জন্মে নিশ্চিয়ই
পাইব; তখন দেখিবে, সতী-সাধ্বীর ক্ষুদ্র বাহুতে কত বল!
অনুপমা
বড়লোকের মেয়ে, বাটীসংলগ্ন উদ্যানও আছে, মনোরম সরোবরও আছে; সেথা চাঁদও উঠে, পদ্মও ফুটে, কোকিলও গান গায়, মধুপও ঝঙ্কার করে; এইখানে সে ঘুরিয়া ফিরিয়া
বিরহ-ব্যথা অনুভব করিতে লাগিল। এলোচুল করিয়া অলঙ্কার খুলিয়া ফেলিয়া, গাত্রে ধূলি মাখিয়া, প্রেমের যোগিনী সাজিয়া, সরসীর জলে কখনও মুখ দেখিতে লাগিল; কখনও নয়ন-জলে ভাসাইয়া গোলাপ-পুষ্প চুম্বন করিতে লাগিল; কখনও অঞ্চল পাতিয়া তরুতলে শয়ন করিয়া হা-হুতাশ ও
দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিতে লাগিল; আহারে রুচি নাই, শয়নে ইচ্ছা নাই, সাজসজ্জায় বিষম বিরাগ, গল্প-গুজবে রীতিমত বিরক্তি—অনুপমা দিন দিন শুকাইতে লাগিল।
দেখিয়া
শুনিয়া অনুর জননী মনে মনে প্রমাদ গণিলেন—এক বৈ মেয়ে
নয়, তার আবার এ কি হইল?
জিজ্ঞাসা করিলে সে কি- যে
বলে, কেহ বুঝিতে পারে না; ঠোঁটের কথা ঠোঁটেই মিলাইয়া যায়। অনুর জননী একদিবস জগবন্ধুবাবুকে বলিলেন, ওগো, একবার কি চেয়ে দেখবে
না? তোমার একটি বৈ মেয়ে নয়,
সে যে বিনি চিকিৎসায়
মরে যায়।
জগবন্ধুবাবু
বিস্মিত হইয়া বলিলেন, কি হ’ল
ওর?
তা
জানিনে। ডাক্তার আসিয়া দেখিয়া শুনিয়া বলিলেন, অসুখ-বিসুখ কিছু নাই।
তবে
এমন হয়ে যায় কেন?
জগবন্ধুবাবু
বিরক্ত হইয়া বলিলেন, তা কেমন করে
জানব?
তবে
মেয়ে আমার মরে যাক?
এ
ত বড় মুশকিলের কথা, জ্বর নেই, বালাই নেই, শুধু শুধু যদি মরে যায় ত আমি কি
ধরে রাখব?
গৃহিণী
শুষ্কমুখে বড়বধূমাতার নিকট ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, বৌমা, অনু আমার এমন করে বেড়ায় কেন?
কেমন
করে জানব মা?
তোমাদের
কাছে কি কিছু বলে
না?
কিছু
না।
গৃহিণী
প্রায় কাঁদিয়া ফেলিলেন—তবে কি হবে? না
খেয়ে না শুয়ে এমন
করে সমস্তদিন বাগানে ঘুরে বেড়ালে ক’দিন আর
বাঁচবে? তোরা বাছা যা হোক একটা
বিহিত করে দে—না হলে
বাগানের পুকুরে একদিন ডুবে মরব।
বড়বৌ
কিছুক্ষণ ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিল, দেখে শুনে একটা বিয়ে দাও; সংসারের ভার পড়লে আপনি সব সেরে যাবে।
বেশ
কথা, তবে আজই এ কথা আমি
কর্তাকে জানাব।
কর্তা
এ কথা শুনিয়া অল্প হাসিয়া বলিলেন, কলিকাল! দাও—বিয়ে দিয়েই দেখ, যদি ভাল হয়।
পরদিন
ঘটক আসিল। অনুপমা বড়লোকের মেয়ে, তাহাতে রূপবতী, পাত্রের জন্য ভাবিতে হইল না। এক সপ্তাহের মধ্যেই
ঘটকঠাকুর পাত্র স্থির করিয়া জগবন্ধুবাবুকে সংবাদ দিলেন। কর্তা এ কথা গৃহিণীকে
জানাইলেন; গৃহিণী বড়বৌকে জানাইলেন; ক্রমে অনুপমাও শুনিল।
দুই-একদিন পরে, একদিন দ্বিপ্রহরের সময়ে সকলে মিলিয়া অনুপমার বিবাহের গল্প করিতেছিল, এমন সময়ে সে এলোচুলে, আলুথালু-বসনে একটা শুষ্ক গোলাপফুল হাতে করিয়া ছবিটির মত আসিয়া দাঁড়াইল।
অনুর জননী কন্যাকে দেখিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, মা যেন আমার
যোগিনী সেজেছেন!
বড়বৌঠাকরুনও
একটু হাসিয়া বলিল, বিয়ে হলে কোথায় সব চলে যাবে।
দুটো-একটা ছেলে-মেয়ে হলে ত কথাই নেই।
অনুপমা
চিত্রার্পিতার ন্যায় সকল কথা শুনিতে লাগিল। বৌ আবার বলিল,
মা, ঠাকুরঝির বিয়ের কবে দিন ঠিক হ’ল?
দিন
এখনো কিছু ঠিক করা হয়নি।
ঠাকুরজামাই
কি পড়েন?
এইবার
বি.এ. দেবেন।
তবে
ত বেশ ভাল বর। তাহার পর একটু হাসিয়া
ঠাট্টা করিয়া বলিল, দেখতে কিন্তু খুব ভাল না হলে ঠাকুরঝির
আমার পছন্দ হবে না।
কেন
পছন্দ হবে না? জামাই আমার বেশ দেখতে।
এইবার
অনুপমা একটু গ্রীবা বক্র করিল; ঈষৎ হেলিয়া পদনখ দিয়া মৃত্তিকা খনন করিবার মত করিয়া নখ
খুঁড়িতে খুঁড়িতে বলিল, বিবাহ আমি করব না।
জননী
ভাল শুনিতে না পাইয়া জিজ্ঞাসা
করিলেন, কি মা?
বড়বৌ
অনুপমার কথা শুনিতে পাইয়াছিল। খুব জোরে হাসিয়া উঠিয়া বলিল, ঠাকুরঝি বলছে, ও কখনও বিয়ে
করবে না।
বিয়ে
করবে না?
না।
না
করুক গে! অনুর জননী মুখ টিপিয়া একটু হাসিয়া চলিয়া গেলেন।
গৃহিণী
চলিয়া যাইলে বড়বধূ বলিল, তুই বিয়ে করবি নে?
অনুপমা
পূর্বমত গম্ভীরমুখে বলিল, কিছুতেই না।
কেন?
যাকে
তাকে গছিয়ে দেওয়ার নামই বিবাহ নয়! মনের মিল না হলে বিবাহ
করাই ভুল।
বড়বৌ
বিস্মিত হইয়া অনুর মুখপানে চাহিয়া বলিল, গছিয়ে দেওয়া আবার কি লো? গছিয়ে
দেবে না ত কি
মেয়েমানুষে দেখে শুনে পছন্দ করে বিয়ে করবে?
নিশ্চয়!
তবে
তোর মতে আমার বিয়েটাও ভুল হয়ে গেছে? বিয়ের আগে ত তোর দাদার
নাম পর্যন্ত আমি শুনিনি।
সবাই
কি তোমার মত?
বৌ
আর একবার হাসিয়া বলিল, তোর কি তবে মনের
মানুষ কেউ জুটেছে নাকি?
অনুপমা
বধূঠাকুরানীর সহাস্য বিদ্রূপে মুখখানি পূর্বাপেক্ষা চতুর্গুণ গম্ভীর করিয়া বলিল, বৌ, ঠাট্টা করছ নাকি? এখন কি বিদ্রূপের সময়?
কেন
লো—হয়েচে কি?
হয়েচে
কি? তবে শোন—অনুপমার মনে হইল, তাহার সম্মুখে তাহার স্বামীকে বধ করা হইতেছে—সহসা কতলু খাঁর দুর্গে বধমঞ্চ-সম্মুখে বিমলা ও বীরেন্দ্র সিংহের
দৃশ্য তাহার মনে ভাসিয়া উঠিল। অনুপমা ভাবিল, তাহারা যাহা পারে, সে কি তাহা
পারে না? সতী স্ত্রী জগতে কাহাকে ভয় করে? দেখিতে দেখিতে তাহার চক্ষু অনৈসর্গিক প্রভায় ধকধক করিয়া জ্বলিয়া উঠিল, দেখিতে দেখিতে অঞ্চলখানা কোমরে জড়াইয়া গাছকোমর বাঁধিয়া ফেলিল। ব্যাপার দেখিয়া বড়বধূ তিন হাত পিছাইয়া গেল। নিমেষে অনুপমা পার্শ্ববর্তী খাটের খুরো বেশ করিয়া জড়াইয়া ধরিয়া ঊর্ধ্বনেত্রে চিৎকার করিয়া কহিতে লাগিল, প্রভু, স্বামী, প্রাণনাথ, জগৎসমীপে আজ আমি মুক্তকন্ঠে
স্বীকার করব, তুমিই আমার প্রাণনাথ; প্রভু, তুমি আমার, আমি তোমার! এ খাটের খুরো
নয়, এ তোমার পদযুগল—আমি ধর্ম সাক্ষী করে তোমাকে পতিত্বে বরণ করেছি, এখনও তোমার চরণ স্পর্শ করে বলছি—এ জগতে তুমি
ছাড়া অন্য কেউ আমাকে স্পর্শও করতে পারবে না, কার সাধ্য প্রাণ থাকতে আমাদিগকে বিচ্ছিন্ন করে! মা গো, জগৎজননী—
বড়বধূ
চিৎকার করিয়া ছুটিয়া বাহিরে আসিয়া পড়িল—ও গো দেখ
গে, ঠাকুরঝি কেমন ধারা কচ্ছে!
দেখিতে
দেখিতে গৃহিণী ছুটিয়া আসিলেন। বৌঠাকরুনের চিৎকার বাহির পর্যন্ত পঁহুছিয়াছিল—কি হয়েচে—হ’ল কি? কর্তা
ও তাঁহার পুত্র চন্দ্রবাবু ছুটিয়া আসিলেন। কর্তা-গিন্নীতে, পুত্র-পুত্রবধূতে, দাস-দাসীতে মুহূর্তে ঘরে ভিড় হইয়া গেল। অনুপমা মূর্ছিত হইয়া খাটের কাছে পড়িয়া আছে। গৃহিণী কাঁদিয়া উঠিলেন, অনুর আমার কি হ’লো?
ডাক্তার ডাক্! জল আন্! বাতাস
কর্!—ইত্যাদি চীৎকারে পাড়ার অর্ধেক প্রতিবাসী বাড়িতে জমিয়া গেল।
অনেকক্ষণ
পরে চক্ষুরুন্মীলন করিয়া অনুপমা ধীরে ধীরে বলিল, আমি কোথায়?
তাহার
জননী মুখের নিকট মুখ আনিয়া সস্নেহে বলিলেন, কেন মা, তুমি যে আমার কোলে
শুয়ে আছ।
অনুপমা
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মৃদু মৃদু কহিল, ওঃ, তোমার কোলে! ভাবছিলাম আমি আর কোথাও কোন
স্বপ্নরাজ্যে তাঁর সঙ্গে ভেসে যাচ্ছি। দরবিগলিত অশ্রু তাহার গন্ড বাহিয়া পড়িতে লাগিল। জননী তাহা মুছাইয়া কাতর হইয়া বলিলেন, কেন কাঁদচ মা? কার কথা বলচ?
অনুপমা
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মৌন হইয়া রহিল।
বড়বধূ
চন্দ্রবাবুকে একপাশে ডাকিয়া বলিল, সবাইকে যেতে বল, আর কোন ভয়
নেই; ঠাকুরঝি ভাল হয়েচে।
ক্রমশঃ
সকলে প্রস্থান করিলে রাত্রে বড়বৌ অনুপমার কাছে বসিয়া বলিল, ঠাকুরঝি, কার সঙ্গে বিয়ে হলে তুই সুখী হ’স?
অনুপমা
চক্ষু মুদ্রিত করিয়া কহিল, সুখ-দুঃখ আমার কিছুই নেই; সেই আমার স্বামী—
তা
ত বুঝি—কিন্তু কে সে?
সুরেশ!
সুরেশই আমার—
সুরেশ?
রাখাল মজুমদারের ছেলে?
হাঁ,
সেই।
রাত্রে
গৃহিণী এ কথা শুনিলেন।
পরদিন অমনি মজুমদারের বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। নানা কথার পর সুরেশের জননীকে
বলিলেন,তোমার ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে দাও।
সুরেশের
জননী হাসিয়া বলিলেন, মন্দ কি!
ভাল-মন্দর কথা নয়, দিতেই হবে।
তবে
সুরেশকে একবার জিজ্ঞাসা করে আসি। সে বাড়িতেই আছে;
তার মত হলে কর্তার
অমত হবে না।
সুরেশ
বাড়ি থাকিয়া তখন বি.এ. পরীক্ষার
জন্য প্রস্তুত হইতেছিল—একমুহূর্ত তাহার এক বৎসর। তাহার
মা বিবাহের কথা বলিলে, সে কানেই তুলিল
না। গৃহিণী আবার বলিলেন, সুরো, তোকে বিয়ে করতে হবে।
সুরেশ
মুখ তুলিয়া বলিল, তা ত হবেই,
কিন্তু এখন কেন? পড়ার সময় ও-সব কথা
ভাল লগে না।
গৃহিণী
অপ্রতিভ হইয়া বলিলেন, না না—পড়ার
সময় কেন? একজামিন হয়ে গেলে বিয়ে হবে।
কোথায়?
এই
গাঁয়ে জগবন্ধুবাবুর মেয়ের সঙ্গে।
কি?
চন্দ্রর বোনের সঙ্গে? যেটাকে খুকী বলে ডাকত?
খুকী
বলে ডাকবে কেন—তার নাম অনুপমা।
সুরেশ
অল্প হাসিয়া বলিল, হাঁ অনুপমা! দূর তা—দূর সেটা
ভারী কুৎসিত।
কুচ্ছিত
হবে কেন? সে বেশ দেখতে।
তা
হোক বেশ দেখতে; এক জায়গায় শ্বশুরবাড়ি,
বাপের বাড়ি আমার ভাল লাগে না।
কেন,
তাতে আর দোষ কি?
দোষের
কথায় কাজ নেই, তুমি এখন যাও মা, একটু পড়ি; কিছুই এখনো হয়নি।
সুরেশের
জননী ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, সুরো ত এক গাঁয়ে
কিছুতেই বিয়ে করতে চায় না।
কেন?
তা
ত জানিনে।
অনুর
জননী মজুমদার-গৃহিণীর হাত ধরিয়া কাতরভাবে বলিলেন, তা হবে না
ভাই! এ বিয়ে তোমেকে
দিতে হবে।
ছেলের
অমত, আমি কি করব বল?
না
হলে আমি কিছুতেই ছাড়ব না।
তবে
আজ থাক। কাল আর একবার বুঝিয়ে
দেখব—যদি মত করতে পারি।
অনুর
জননী বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া জগবন্ধুকে বলিলেন, ওদের সুরেশের সঙ্গে যাতে অনুর আমার বিয়ে হয়, তা কর।
কেন
বল দেখি? রায়গ্রামে ত একরকম সব
ঠিক হয়েছে। সে সম্বন্ধ আবার
ভেঙ্গে কি হবে?
কারণ
আছে।
কি
কারণ?
কারণ
কিছু নয়; কিন্তু সুরেশের মত অমন রূপে-গুণে ছেলে কি পাওয়া যাবে?
আর ও, আমার একটিমাত্র
মেয়ে, তার দূরে বিয়ে দেব না। সুরেশের সঙ্গে হলে যখন খুশি দেখতে পাব।
আচ্ছা
চেষ্টা করব।
চেষ্টা
নয়—নিশ্চিত দিতে হবে।
কর্তা
নথ নাড়ার ভঙ্গী দেখিয়া হাসিয়া ফেলিলেন,—তাই হবে গো।
সন্ধ্যার
পর কর্তা মজুমদার-বাটী হইতে ফিরিয়া আসিয়া গৃহিণীকে বলিলেন, বিয়ে হবে না।
সে
কি কথা?
কি
করব বল? ওরা না দিলে ত
আমি জোর করে ওদের বাড়িতে মেয়ে ফেলে দিয়ে আসতে পারিনে।
দেবে
না কেন?
এক
গাঁয়ে বিয়ে হয়—ওদের মত নয়।
গৃহিণী
কপালে করাঘাত করিয়া বলিলেন, আমার কপালের দোষ! পরদিন তিনি পুনরায় সুরেশের জননীর নিকট আসিয়া বলিলেন, দিদি, বিয়ে দে!
আমার
ত ইচ্ছা আছে, কিন্তু ছেলের মত হয় কৈ?
আমি
লুকিয়ে সুরেশকে আরো পাঁচ হাজার টাকা দেব।
টাকার
লোভ বড় লোভ। সুরেশের জননী এ কথা সুরেশের
পিতাকে জানাইলেন। কর্তা সুরেশকে ডাকিয়া বলিলেন, সুরেশ, তোমাকে এ বিবাহ করতেই
হবে।
কেন?
কেন
আবার কি? এ বিবাহে তোমার
গর্ভধারিণীর মত, আমারও মত; সঙ্গে সঙ্গে একটু কারণও হয়ে পড়েছে।
সুরেশ
নতমুখে বলিল, এখন পড়াশুনার সময়—পরীক্ষার ক্ষতি হবে।
তা
আমি জানি বাপু, পড়াশুনার ক্ষতি করে তোমাকে বলছি না। পরীক্ষা শেষ হলে বিবাহ ক’রো।
যে
আজ্ঞে।
অনুর
জননীর আনন্দের সীমা নাই। এ কথা তিনি
কর্তাকে বলিলেন। দাসদাসী সকলকেই মনের আনন্দে এ কথা জানাইয়া
দিলেন।
বড়বৌ
অনুপমাকে ডাকিয়া বলিল, ওলো! বর যে ধরা
দিয়েছে।
অনু
সলজ্জে ঈষৎ হাসিয়া বলিল, তা আমি জানতাম।
কেমন
করে জানলি? চিঠিপত্র চলত নাকি?
প্রেম
আন্তর্যামী! আমাদের চিঠিপত্র অন্তরে চলত।
ধন্যি
মেয়ে তুই!
অনুপমা
চলিয়া যাইলে বড়বধুঠাকুরানী মৃদু মৃদু বলিল, পাকামি শুনলে গা জ্বালা করে!
আমি তিন ছেলের মা—উনি আজ
আমাকে প্রেম শেখাতে এলেন!
0 Reviews