Read more
ডাডাইজম্—
এই আন্দোলনকে সংক্ষেপে বলা যায় ‘Artistic
and literary movement', অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়াতে বলা হয়েছে— “a movement in European and US. Art characterised by
violent revolt against traditional values”, এই আন্দোলন নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। ১৯১৬ খ্রী: জুরিখে রুমানিয়ার কবি Tristan Tzara, জার্মান লেখক Hugo Ball ও কবি ও স্থপতিবিদ Hans Asp শিল্প ও সাহিত্যে নব চেতনার সঞ্চারের জন্য মিলিত হন। ১৯১৬ হতে ১৯১৯ এর মধ্যে নিউইয়র্কে Marcel
Duchamp, Man Ray ও Francis
Picabia অনুরূপ আর একটি সংগঠন সৃষ্টি করেন। ১৯২০ খ্রী: এই দুটি সংগঠন মিলিত হয়ে প্যারিসে তাদের হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে Literature
নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে।'
‘ডাডা’ ফরাসী শব্দ যার অর্থ কাঠের ঘোড়া (hobby
horse)। ডাডা শব্দটি প্রাপ্তির ইতিহাস শুনিয়েছেন ত্রিস্তান জারা। তিনি একদিন সয় কাফের মধ্যে জার্মান ফরাসী অভিধানের উপর একটি ধারালো ছুরি বসিয়েছেন। ছুরির তীক্ষ্ণ ফলা পাতা বিদ্ধ করে যেখানে গিয়ে থামল, সেখানেই পাওয়া গেল 'ডাডা' শব্দটি। অতঃপর ঐ শব্দটিই হল আন্দোলনের শিরোনাম। অন্যতম আর একজন ডাডাবাদী রিচার্ড হুনসেন বেক শিরোনাম সংক্রান্ত কৃতিত্বের অংশীদার রূপে নিজেকে এবং Hugo Ball কে চিহ্নিত করেছেন। যা কিছু স্থির, সুস্থিত সংহত, যা কিছু নীতি চেতনা, ধর্মবোধ ও মূল্যবোধ নির্ভর, যা কিছু মহৎ, চিরন্তন ও বিশ্বজনীন— তা ধ্বংস করাই ডাডাবাদীদের লক্ষ্য। কবিতা সৃষ্টির পদ্ধতির পরিবর্তন চেয়ে এরা দাবী করল যা স্বভাবত চিন্তার ফসল নয়, তাকে স্বয়ম্ভু বলা যায় না। ছন্দোবদ্ধ বাক বিন্যাস কবিতা নয়, স্বয়ম্ভু রচনাই কবিতা – যাতে আছে অচেতন ও অবচেতনের প্রভাব। কবিতা হল অবচেতনের উন্মোচন— তাই অবিন্যস্ত, অসংলগ্ন, দুর্বোধ্য ও পারস্পর্যহীন। অবচেতনের নামে মানস লোকের স্বৈরাচারিতার অবারিত প্রকাশ ঘটল কবিতায়। ক্যাবারে ক্লাবে হুগো বল কবিতা পাঠ করলেন— অর্থহীন ধোঁয়াশা, বল্গাহীন ও উদ্ভট কল্পনা। জারা বললেন যে খবরের কাগজে এলোােলো কাঁচি চালিয়ে একমুঠো শব্দ তুলে বার কয়েক ঝাঁকুনি দিয়ে পর পর সাজালেই কবিতা হতে পারে। “It is
instinctual epression free from constraints and the consequent cultivation of
destructiveness, randomness and incoherence". ১৯২২ খ্রী: এ এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। দুই প্রধান ডাডাবাদী ব্রেত ও আরাগঁ ডাডাবাদ পরিত্যাগ করে পরাবাস্তবতা আন্দোলনের সূচনা করা মাত্রই ডাডাবাদ জ্বলে ওঠা স্ফুলিঙ্গের মতই অকালে নির্বাপিত হল। বাংলার মাটিতে ডাডাবাদ আন্দোলনের চেহারা নিয়ে কখনও হাজির হয়নি। দু একজন দু একটি কবিতা ডাডাবাদী ভঙ্গিমায় লিখে থাকলেও, তা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। রবীন্দ্র বিরোধিতার পথে কল্লোলের কবিরা নতুন পথের দিশারী হয়েও মনের চেতন অংশকে অস্বীকার করেন নি এবং অবচেতনের দাসত্ব ও স্বীকার করেননি। ১৯৫০ সালের কবিরা জৈবিক বৃত্তি, নগ্নতা এসব কবিতার মধ্যে উপজীব্য করে তুললেও ঘোলা জলে মাছ ধরার মনোবৃত্তি তাদের মধ্যে প্রকাশ পায়নি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরবর্তী কালে যে সব তরুণ কবিরা নগ্নতাকে হাতিয়ার করে জৈবিক আকর্ষণের সুড়সুড়ি দেওয়াতে ব্যাপৃত ছিলেন, তারাও কেউই ডাডাবাদী নন, তারা হাংরি জেনারেসানের প্রতিনিধি। অবচেতনের উন্মুক্ত প্রকাশ নয়, এদের কবিতায় যা ছিল, তা বিকৃত ক্ষুধার বিকৃত অনুশীলন। হঠাৎ করে কোন কবিতায় অবচেতনের অর্থহীন উদ্ভাস, এলোমেলো কথার বিন্যাস এসব চোখে পড়ে। ডাডাবাদের প্রভাব বিচ্ছিন্নভাবে এসে পড়লেও ডাডাবাদী ভূমিকা নিয়ে কোন কবিতা আন্দোলন বাংলা সাহিত্যে গড়ে ওঠেনি।
0 Reviews