Read more
ইমপ্রেসনিজম (Impressionism)
কবিতা রচনার প্রক্রিয়া নদীর স্রোতের মতই বহমান। পাশ্চত্যে এই কবিতা প্রবাহে বিভিন্ন সময়ে আবর্ত সৃষ্টি হয়েছে, কোন আবর্ত দীর্ঘস্থায়ী, কোনটা বা ক্ষণস্থায়ী। এই সব আবর্তই বিবিধ কবি আন্দোলনের রূপরেখার সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। উনিশ শতকের ফ্রান্সে ইম্প্রেসনিষ্ট ভাবধারায় যে আন্দোলন শুরু হয়, মূলত তা ছিল চিত্রশিল্পকে কেন্দ্র করে। ক্লোদ মানের একটি ছবি যার নাম ছিল “Impression-sunrise', তার থেকেই আন্দোলনকারীদের ভাবধারা 'ইম্প্রেশনিষ্ট' হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যায়। রোমান্টিক শিল্প কলায় শিল্পীর ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ ঘটত। ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীরা রোমান্টিক ধারণা এবং প্রচলিত গতানুগতিকতাকে অগ্রাহ্য করে প্রাকৃতিক দৃশ্যপটকে তার প্রকৃত পারিপার্শ্বিকতায় যথাযথ ভাবে রং ও আলোর যাথার্থতা নিরুপণ করে ফুটিয়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নানা রং এর মিশ্রণ ঘটিয়ে, বিভিন্ন বস্তুর বিভিন্নপ্রকার তলের উপর বিভিন্ন প্রকারের প্রতিভাস গড়ে তোলার এক নতুন শিল্প আঙ্গিক তাঁরা প্রবর্তন করেছিলেন। ফ্রান্সে ক্লোদ, শারদাঁ, দেলাক্রোয়া, কোবে, এদগার দোলা, অ্যানফ্রেড সিসিলি, বেনোয়ার এবং পিসারো প্রমুখ শিল্পীরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইম্প্রেশনিজমের বাংলা নাম বাস্তব রূপবাদ, বাস্তব রুপবাদীদের দল থেকে রিয়ে এসে সেজান গঠন করলেন Post Impressionism.
ক্রমে এই বাস্তবরূপবাদ বা ইম্প্রেশনিজম কবিতার ক্ষেত্রে অনুপ্রবিষ্ট হল, বিশেষ করে realistic writing এর অভাব এবং লিটারেচারের সিমেটিক ধারণার কারণে। সাহিত্যক্ষেত্রে ইম্প্রেশনিজমের স্বরূপ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, “a penchant for subtle nuances,
refined perception and the ornamental use of preciou aayes with poetic
jugendstil
and the decorative arts, the preference of which for the
openness of allusive. hints over conceptually fixed meaning and its fuid
suggestion of atmosphere
through a quick suggestion of sensory impressions".
মূলত: ইম্প্রেশনিষ্ট কবিতা হল প্রতীকতন্ত্রী ও চিত্রকল্পবাদী। কবিতার ক্ষেত্রে এর যে বৈশিষ্ট্যগুলি ধরা পড়ে তা হল;
i)
Sponteneous
evocation of sensory or mental associations (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মানসিক অনুষঙ্গের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত আবেদন)।
ii)
Neutralization
of mediating function of language as well as metaphorical qualities as used in
symbolist poetry. (ভাবমাধ্যমকে এবং সিমবলিষ্ট কবিতায় image ব্যবহার পদ্ধতিকে নিরপেক্ষ করণ)
ইম্প্রেশনিষ্ট পদ্ধতি প্রথম দৃষ্ট হয় Verlaine এর 'Bonne Chanson' এবং অন্যান্য কবিতায়; Jules laforgue এর 'vers libre' তে এবং Mallarmeর রচনায়। পরবর্তীকালে Stefan George এবং Rainer Maria Rilke প্রমুখ ইউরোপীয় কবিরাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। ইম্প্রেশনিজম কবিতায় কখনই School of Poetry রূপে আবির্ভূত হয়নি। I Detlev Von, Richard Dehmal, Max
Dautheudey, Gustav Falke, Arno Holz এবং ইংরাজী সাহিত্যে Yeats ও Eliot এর কিছু কবিতায় বাস্তবধর্মী চিত্রকল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। ইয়েটস্ ইম্প্রেশনিষ্ট নন, সিম্বলিষ্ট, টি. এস. এলিয়টও নন, তবু এঁদের রচনায় মাঝেমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে আলো ও রং এর বর্ণনাত্মক খেলা।
"Astraddle on the dolphin's mire and blood Spirit after
spirit! The Smithies break the flood
The golden smithies of the emperor!
Marbles of the dancing floor
Break bitter furies of complexity,
Those images that yet
Fresh images beget
That dolphin-torn that going tormented Sea". (Byzantium)
কবি এলিয়ট তাঁর Poetic shorthand এ Waste Land এর বহু দৃশ্য এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যা বিশ্বজনীন হয়ে লণ্ডন, প্যারিস, বোদলেয়ারের নগরী এমনকি দান্তের Limbo এর সমগোত্রীয় হয়ে উঠেছে।
Unreal City
Under the brown fog of a winter down
A Crowd flowed over London Bridge, so
many
I had not thought death had undone so
many".
অথবা ‘The Love Song of J. Alfred
Prufrock' এ
তিনি যে ছবি এঁকেছেন, তাতেও রয়েছে আলো ও রং এর খেলা-
"The yellow fog that rubs it back upon the window-panes The
Yellow smoke that rubs its muzzle on the window-panes, Licked its tongue into
Corners of the evening Lingered upon the pools that stand in drains."
ইম্প্রেসনিষ্টরা খণ্ড অংশের মধ্যে চিত্রময়তাকে বর্ণাঢ্য করে তোলেন। এই খণ্ড অংশের কোন ধারাবাহিকতা থাকে না— মনে হয় অসংলগ্ন, এলেমেলো কিছু চিত্র— যেমন চলন্ত রেলগাড়ির ভিতর হতে বাইরের দিকে তাকালে অসম্পূর্ণ অসংলগ্ন দৃশ্যাবলী চোখের সামনে দিয়ে পিছনে অন্তহিত হয়, কিন্তু দুরের পিছনে আভাষিত হয়ে ওঠে এক ধূসর চিত্রপঠ। রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতায় চিত্রময় বর্ণাঢ্যতা আছে, কিন্তু তা খণ্ড অংশের উপর নির্ভরশীল নয় বলে তাঁকে ইম্প্রেশনিষ্ট দলভুক্ত করা হয় না। যথার্থ ইম্প্রেশনিষ্ট কবি বলা হয় জীবনানন্দকে। খণ্ড অংশের উপর তাঁর বর্ণনা ইম্প্রেশনিষ্ট চিত্রকরদের আঁকা ছবির মতই আপাতঃ অর্থহীন, কিন্তু সমগ্রতার রূপ পায় পূর্ণ এক পরিণত চিত্র। অঘ্রাণের অন্ধকারে সবুজ পাতার হলুদ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে হিজলের জানালায় আলো আর বুলবুলির খেলার কোন আপাত সাদৃশ্য না থাকলেও উভয় দৃশ্যই জীবন সায়াহ্নে মৃত্যুর বোধের স্মারক হয়ে উঠেছে। 'আট বছর আগের একদিন' বা ‘বেড়াল' কবিতায় ইম্প্রেশনিষ্ট শিল্পীর কাজের নমুনা দৃষ্ট হয়।
“সারাদিন একটা বেড়ালের সঙ্গে ঘুরে ফিরে কেবলই আমার দেখা হয় গাছের ছায়ায়, রোদের ভিতরে, বাদামী পাতার ভিড়ে....... হেমন্তের সন্ধ্যায় জাফরান রঙের সূর্যের নরম শরীরে শাদা থাবা বুলিয়ে বুলিয়ে খেলা করতে দেখলাম তাকে, তারপর অন্ধকারকে ছোট ছোট বলের মতো থাবা দিয়ে লুফে আনল সে সমস্ত পৃথিবীর ভেতর ছড়িয়ে দিল।.......... “বেড়াল”।
0 Reviews