Read more
হজরত ওসমান গণি রা.
আরবের ৮০ ভাগ মানুষ ছিল বেদুইন। এদের জীবিকা ছিল লুঠতরাজ। বাকি ২০ শতাংশ চাষ বাস ব্যবসা বাণিজ্য করত। এঁদের মধ্যে কোরায়েসরা ছিলেন সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত। এই সম্ভ্রান্ত কোরায়েস বংশে ৫৭৭ খৃষ্টাব্দে হজরত ওসমান গণি রা. জন্ম গ্রহণ করেন। বয়সের দিক দিয়ে ইনি হজরত মুহাম্মদ স. অপেক্ষা ৭ বছরের কনিষ্ঠ।
বংশ তালিকা দেখলে পাই আবদে মান্নাফের পুত্র আবদে সামস, আবদে সামসের পুত্র উমাইয়া, উমাইয়া পুত্র আস, আস পুত্র আফফান, আফফান পুত্র হজরত ওসমান রা.। অর্থাৎ পাঁচ পুরুষ পূর্বে রসুল স. এর পূর্ব পুরুষের সংগে মিলন ঘটে। মাতা ছিলেন আরভি বিনতে কারিজ। পিতামাতা উভয়েই সম্ভ্রান্ত কোরায়েস বংশীয়।
ব্যবসা করে অনেক ধন সম্পদের উত্তরাধিকারী হন বলে 'গণি' উপাধি পান। এছাড়াও তাঁকে জিন্নুরায়েন ও জামেউল কোরআন আখ্যায় ভূষিত করা হয়। মুহাম্মদ স. এর চরিত্রের সংগে ওসমান গণি রা. চরিত্রের বিশেষ মিল লক্ষ করি দুজনেই ছিলেন চরিত্রবান, দয়াবান, মৃদুভাষী, পরোপকারী, বিনীত, মূর্তি পূজার বিরোধী। দু'জনেই ছিলেন পরস্পরের নিকটতমজন।
হজরত মুহাম্মদ স. কোন রকম আনুষ্ঠানিক জ্ঞান আহরণ করেননি। কিন্তু জ্ঞানী পিতার সংস্পর্শে ওসমান গণি রা. পার্থিব জ্ঞান শিক্ষা করেন। এবং কোরায়েসদের মধ্যে অন্যতম জ্ঞানীজন ছিলেন। ছিলেন দয়ালু, লজ্জাশীল, মন্ত্র প্রকৃতির মানুষ।
শরীরের গড়ন ছিল মধ্যম আকৃতির, রং ছিল ফরসা। মস্তক পূর্ণ চুল। সুন্দর সাজানো দাঁত।
হজরত মুহাম্মদ স. যখন নবুওত পান সে সময় ওসমান গণি রা. বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ায় অবস্থান করছিলেন। সিরিয়া থেকে ফিরে হজরত আবু বকর
• ৬৪৪ খৃষ্টাব্দ মদিনায় রসুল স. কবরের পাশে চিরশয্যায় শায়িত হন। সিদ্দিকী রা. উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় ইসলাম গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, অধিকাংশ
খেলাফতি পদে ওসমান রা.।
ঐতিহাসিকের মতে ওসমান রা. ১৪তম ব্যক্তি যাঁরা মুহাম্মদ স. এর হাতে প্রথম হাত দিয়ে ইসলামে দীক্ষা নিয়েছেন।
ইসলামে দীক্ষা নেবার পর রসুল মুহাম্মদ স. এর সুখ দুঃখের সাথী হয়ে পড়েন। মক্কার কোরায়েসরা যখন মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের রোলার চালাতে
রসুল মুহাম্মদ স. বলেন, বেহেসতে প্রত্যেক নবীর সঙ্গী থাকবে, আমার
সঙ্গী হবে হজরত ওসমান রা:।
→ হজরত ওসমান রা. বাণী ও উপদেশ-
• পৃথিবীর মোহ অন্ধকার স্বরূপ, আর পরকালের আকাংখা জ্যোতি বিশেষ। মৃত্যুর ফেরেসতা আসার আগেই পুণ্যের কাজ শেষ করা উচিত।
• মোমিনের লক্ষণ তাঁরা নিজেদের পাপী ও ধ্বংস প্রাপ্ত মনে করে আর অন্যদের মনে করেন মুক্তি প্রাপ্ত।
• ঐ ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ যিনি দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন কিন্তু পরকালের কথা চিন্তা করেননি। ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে ভাল যিনি সংযমী এবং কোরআনে নির্ভরশীল।
• যা আছে ও পাওয়া যায় তাতেই সন্তুষ্ট থাকা। যা নেই ও পাওয়া যায় না সে সম্পর্কে ধৈর্য ধারণ।
• কাউকে প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করা উচিত।
• যারা পৃথিবীকে কারাগার মনে করে, কবর তাদের জন্য শান্তির আলয়। → জীবনের দু-এক পশলা ঘটনা
• হজরত মুহাম্মদ স. মনস্থির করেছেন কনিষ্ঠা কন্যাকে তুলে দেবেন প্রায় নিঃস্ব আলি র. হাতে। কিন্তু আলি কিভাবে বিয়ের আঞ্জাম করবেন। সম্বল বলতে, একখানা তরবারী, একটা বর্ম, আর একটা উট। উটটি খুব দরকারী বাহন। তরবারী যুদ্ধের প্রয়োজনে লাগবে। বর্মটি বেচে দেওয়া যেতে পারে। খরিদ্দার খোঁজা হল সর্বোচ্চ মূল্য দিতে চাইলেন হজরত ওসমান গণি রা.। ৪০০ দিরহাম। এতো দাম (Price) নয় এ হল আলি রা. সম্মান মূল্য (Value) । বর্মটি নিয়ে দাম মিটিয়ে দিলেন। অপরদিকে দেরী না করে ততক্ষণাৎ বর্মটি আলি রা. হাতে তুলে দিয়ে বললেন, হে আলি এটা তোমারই মাথায় মানায়। আমি এটাকে কলংকিত করব না। ওসমান গণি রা. ভ্রাতৃত্ব, ত্যাগ, মহানুভবতা, উদারতা, ঔদার্য, প্রেম, ভালবাসা, সহানুভূতি দেখে সকলে অবাক। সত্যিই ত এ ব্যক্তিই গণি উপাধি পাবার উপযুক্ত। তাইত এ ব্যক্তি দুই রসুল কন্যাকে গ্রহণ করে জুন্নুরায়েন হয়েছেন।
• ইসলামের বাড়বাড়ন্ত দেখে রোম সম্রাট মদিনা আক্রমণ করতে প্রস্তুতি নিল। নবী স. মদিনাবাসীদের কাছে সাহায্যের আবেদন রাখলেন। হজরত ওসমান গণি রা. নিজেকে উজাড় করে দিলেন। দিলেন এক হাজার উট। ৭০টা ঘোড়া। এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা। মাঠ ভরে গেল। খুশী হলেন রসুল স.। বললেন সত্যিই তুমি গণি। ওসমান রা. হয়ে গেলেন ওসমান গণি। মসজিদে নববী সম্প্রসারিত করা হবে। কিন্তু জমি ত এক ইহুদীর। সে স্বাভাবিকভাবে আকাশচুম্বি দাম হাঁকল। কিন্তু এগিয়ে এলেন ওসমান গণি রা. সেই অবাক করা দামেই তিনি কিনে নিলেন জমিটুকু। তুলে দিলেন নবী মুহাম্মদ স. এর হাতে।
• এত ধন সম্পদের মালিক ও খলিফা হয়েও সামান্য চাদর বিছিয়ে ভিখারীদের সঙ্গে শুয়ে থাকতেন। পিঠে ধুলো কাঁকর লেগে যেত। কোন ভ্রুক্ষেপ করতেন না। হজরত ওসমান গণি রা. মধ্যে মানব চরিত্রের সকল প্রকার গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। স্বীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য আরব সমাজে হজরত ওসমানের বিশেষ খ্যাতি ছিল। আশৈশব তিনি উদার ও চরিত্রবান ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর ইসলাম ধর্মের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি ছিলেন ন্যায়নিষ্ঠ। কর্তব্য পরায়ণ ও মহৎব্যক্তি। সততা ও ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে তিনি পর্বত সদৃশ। বিনয় তাঁর চরিত্রের ভূষণ। প্রাচুর্য তাঁকে অহংকারী করতে পারনি। খলিফা হয়েও নিজের ভরণপোষণ রাজদরবার থেকে নেননি। সমস্ত সম্পদ ধর্ম ও জনস্বার্থে ব্যয় করেছেন। ছিলেন খাঁটি দেশপ্রেমিক। প্রতিটি মুসলমানকে ভাই বলে মনে করতেন। স্যার আমীর আলি বলেন। ধর্মপরায়ণতা ছিল প্রকৃত গুণ। নিজের জীবন উৎসর্গ করেও ইসলামের সংহতি রক্ষা ও জনকল্যাণ বিধান তাঁর জীবনের লক্ষ ছিল। অধ্যাপক সুর বলেন। দুর্বল ও অব্যবস্থিত চিত্ত হলেও তাঁর হৃদয় ছিল কোমল ও উদার। তিনি এত বেশি উদার অমায়িক ও স্নেহপ্রবণ ছিলেন যে প্রয়োজনবোধেও তিনি কখনো কঠোর হতে পারেননি। খলিফা হিসাবে তাঁর চরিত্রে দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও কূটনৈতিক জবানের অভাব ছিল। তাঁর সরলতার সুযোগে দুষ্টু ব্যক্তিরা স্বার্থ সিদ্ধ করেছে। যে চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাবে কারো বিরুদ্ধে সময়োপযোগী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন নি। তাঁর রাজত্বের শেষভাগে চতুর্দিকে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত পবিত্র কোরআন পাঠকালিন ৪০ দিন ঘরে অবরুদ্ধ থাকার পর পরিবারের সামনে জীবন দান করতে হয়। এমন কি সুচারুভাবে জানাজা পাঠ না করে লুকিয়ে রাতের অন্ধকারে জান্নাতুল বাকির বাইরে কবরস্থ করা হয়। পরে জান্নাতুল বাকিতে ঐ অংশ ঢুকিয়ে নেওয়া হয়।
0 Reviews