হজরত আলি রা.

হজরত আলি রা.

Size

Read more

  হজরত আলি রা.

যিনি শেরে খোদা উপাধীতে ভূষিত। হায়দরী হাঁকে যাঁকে একবাক্যে চেনা যায়। যিনি বীরত্বের পুরস্কার স্বরূপ রসুল হজরত মুহাম্মদ স. এর কাছ থেকে তরবারী উপহার স্বরূপ পান। যে ব্যক্তির হাতে নবী মুহাম্মদ স. তাঁর সর্বাধিক প্রাণ প্রিয় কন্যাকে তুলে দেন সেই বীর কেশরী হজরত আলি রা. ৬০০ খৃষ্টাব্দে আরবের মক্কা নগরের সুবিখ্যাত কোরায়েস বংশে হাসেমী গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। পিতামাতা উভয় দিক দিয়ে ইনি হাসেমী।

পিতা রসুল হজরত মুহাম্মদ স. এর চাচা আবু তালিব, মাতা ফাতেমা বিনতে আসাদ। আবু তালিবের দুস্থতার জন্য বালক আলি হজরত মুহাম্মদ স. এর কাছে মানুষ হন। পুরুষদের মধ্যে প্রথম (যদিও বালক) সকলের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে রসুল হজরত মুহাম্মদ স. এর হাতে হাত দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।

বাল্যকালে আলি ছিলেন খুব গম্ভীর প্রকৃতির, চিন্তাশীল, স্বল্পভাষী, হাস্যোজ্জ্বল মুখের অধিকারী। খেলাধূলা ভাল না বাসলেও তীর ও তলোয়ার চালনায় আগ্রহ ছিল দারুণ।

ইসলাম গ্রহণের পর হজরত আলি রা. ১২ বৎসর মক্কায় অতিবাহিত করেন। এ সময় তিনি নানা বিপদ আপদের মাঝে মুহাম্মদ স. এর ছায়া সংগী হয়ে সময়কে ব্যয় করেন।

খাদিজার কাছে অতি স্নেহ মায়া পেয়ে মানুষ হতেন। ৬২০ খৃষ্টাব্দে দশম নবুওত বর্ষের ১০ রমজান মুহাম্মদ স. এর স্ত্রী খাদিজা এন্তেকাল করেন ঐ বছর পিতা আবু তালিবও ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যু যত না শোকাবহরূপে তাঁর কাছে উপস্থিত হয় ততোধিক হয় খাদিজার মৃত্যু। পিতা হারা হয়ে আলির ক্ষতির সাথে সাথে হজরত মুহাম্মদ স. এর প্রভূত ক্ষতি হয় কেননা ইনি ছিলেন রসুল স. বিপদের দিনে আশ্রয়স্থল। ইসলাম প্রচারের সহায়ক। যদিও আবু তালিব কোনদিন ইসলাম গ্রহণ করেননি।

মক্কার কোরায়েসদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মদিনায় হিজরতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মক্কাবাসী রসুল মুহাম্মদ স. কে বিশ্বাস করে ধন সম্পদ গচ্ছিত রাখত। দেশ ত্যাগের পূর্বে সেই সব মালপত্র তাদের হাতে তুলে দিতে না পেরে হজরত আলি রা. কে বুঝিয়ে দেন কোন কোন ব্যক্তিকে কোন কোন মালপত্র দিতে হবে। সেই সংগে আলি রা. কে নিজ বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন।

সারা রাত বাড়ি পাহারা দিয়ে সকালেও মুহাম্মদ স. কে দেখতে না পেয়ে সমস্ত ক্রোধ গিয়ে পড়ল হজরত আলি রা. ওপর। নানা প্রশ্নের মুখোমুখী হয়েও তিনি ন্যায় ও সত্যে অবিচল থাকেন। পরে সকলের প্রাপ্য মিটিয়ে দিয়ে মদিনায় হিজরত করেন।

হিজরী তৃতীয় সনে আলি রা. তখন মাত্র ২৩ বৎসরের নওজোয়ান। ফতেমা মাত্র ১৫ বৎসরের যুবতী। হজরত মুহাম্মদ স. নিজ প্রিয়তমা কন্যা ফতেমাতুজ্জোহারাকে তুলে দেবার মনস্থির করেন। বিবাহ প্রস্তাবের পূর্ব পর্যন্ত আলি রা. কল্পনায় আনতে পারেননি ফতেমা হবেন তাঁর ঘরণি। প্রথমতঃ আলি রা. কোন ঘর বাড়ি ছিল না। ছিল না কোন জমি জায়গা। ছিল না কোন স্থায়ী চাকুরীর ব্যবস্থা। পুঁজি বলতে সুঠাম দেহ। সাধুতা। সত্যবাদীতা। ত্যাগ ও নিষ্ঠা। ইসলামের জন্য জীবনপাত।

বিবাহের তৈজষপত্র এবং দেন মোহর দেবার মত অর্থ সম্পদ তাঁর ছিল না। তাই নিজের মাথার শিরস্থানটুকু ৪০০ দিরহামে হজরত ওসমান গণি রা. কে বিক্রি করেন। পরে ওসমান গণি রা. শিরস্থানটি আলি রা. কে ফিরত দেন।

রসুল মুহাম্মদ স. এর নির্দেশ মত হজরত আবু বকর, সালমান ফারসী ও হজরত বেলাল রা. বাজারে গিয়ে একটা বালিশ, একটা গরদা, একখানা চাদর, দুটো বাজুবন্ধ, কয়েকটা মাটির পাত্র ক্রয় করে আনেন। বর্ম বিক্রির অর্থ দ্বারা এগুলো কিনে আলি রা. পক্ষ থেকে ফতেমাকে দেওয়া হয়। মুহাম্মদ স. একটা যাঁতা, দুটো পাজামা, দুটো বাসন, একটা পিয়ালা, একটা জায়নামাজ ও পবিত্র কোরআনের কয়েকটা সুরা যৌতুক হিসাবে দেন। হজরত সাদ রা. একটা বকরী দান করলে সে বকরী জবেহ করে ওলিমা (বৌভাত) সম্পন্ন হয়।

কন্যা বিদায়ের সময় কন্যার মলিন মুখের দিকে চেয়ে মুহাম্মদ স. বলেন, দুঃখ পেও না। আমি তোমার স্বামীর মত উপযুক্ত পাত্র আর কোথাও খুঁজে পাইনি। শুধু আমার ইচ্ছায় নয় আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাকে আলির হাতে তুলে দিলাম। আলি বেশ কিছু দিন রসুল স. বাড়ি থাকেন পরে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে স্ত্রী ফতেমাকে নিয়ে যান। স্বামীগৃহে যাবার সময় জামাতাকে বলেন, ফতেমা আমার অতি আদরের ধন। তার সুখেই আমি সুখী। তার সংগে অযথা দুর্ব্যবহার করলে, বিনা কারণে কষ্ট দিলে আমাকে কষ্ট দেওয়া হয়। জেনে রেখ, বেহেস্তি রমণীদের মধ্যে আমার ফতেমা হবে সর্বশ্রেষ্ঠা।

হিজরী দ্বিতীয় সনের ১৯ রমজান বদরের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর পতাকা আলি হস্তে ছিল। এই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে মহাবীর আলিই প্রথম একক যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পরে মুসলিম পক্ষ জয়লাভ করে। ৭০ জন কোরায়েস মারা যায় এবং ৭০ জন বন্দী হয়। যুদ্ধে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য হজরত মুহাম্মদ স. তাঁর ভাগে প্রাপ্য (যুদ্ধ সম্পদের মধ্যে প্রাপ্য) জুলফিকার তরবারী যেটা ছিল আবু জেহেলের তরবারী তা হজরত আলি রা. হাতে তুলে দেন। ওহদের যুদ্ধেও হজরত আলি রা. বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। বানু কোরায়যার অবরোধকালে হজরত আলি রা. ছিলেন নিশান বরদার। হোদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তির লেখক ছিলেন হজরত আলি রা.।

ওহুদ, খন্দক ও খায়বারের যুদ্ধে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য তাঁকে আসাদুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আসাদুল্লাহ অর্থ আল্লাহর সিংহ। মক্কা বিজয়ের সময় যখন ১০ হাজার সাহাবা নিয়ে হজরত মুহাম্মদ স. মক্কায় প্রবেশ করেন সে সময় ইসলামী পতাকা হজরত আলি রা. ও সাদের হাতে ছিল। তাবুক অভিযানের সময় মদিনার শাসনভার রসুল স. হজরত আলি রা. হাতে ন্যাস্ত করে যান। দশম হিজরী ইয়েমেনে ইসলামের বার্তা বহন করে নিয়ে যান হজরত আলি রা.। এঁর প্রচেষ্টাতে সর্বপ্রথম ইয়েমেনে ইসলাম প্রচার হয়। হজরত মুহাম্মদ স. এর এন্তেকালের পর একদল মানুষ আলিকে খলিফা নির্বাচনের জন্য চাপ দেন। কিন্তু আবু বকর রা. যখন খলিফা নির্বাচিত হন তখন তিনি সেখানে উপস্থিত না থাকলেও পরে নিঃসংকোচে আবু বকর রা. আনুগত্য প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয় আবু বকর ও পরবর্তি দুই খলিফার সময়ে কোন পদাধিকারী না হলেও নানা ব্যাপারে খলিফাদের উপদেশ ও সাহায্য সহযোগিতা করেন। ওমর রা. সময়ে মজলিসে সুরার সদস্য ছিলেন। ওসমান রা. বিভিন্ন ব্যাপারে আলি রা. পরামর্শ নিতেন। বিদ্রোহীগণ যখন ওসমান গণি রা. বাড়ি অবরোধ করে তখন নিজ পুত্রদ্বয় হাসান ও হোসায়েনকে পাঠিয়ে দেন খলিফাকে রক্ষার জন্য। বিদ্রোহীদের নিক্ষিপ্ত তীরে হাসান রা. কে আহতও হতে হয়।

হজরত ওসমান গণি রা. শহীদ হবার পর খলিফার আসন তিনদিন শূন্য পড়ে থাকে। মদিনার প্রধান প্রধান ব্যক্তি আলি রা. কে খেলাফতি গ্রহণ করতে বললে তিনি বলেন, খেলাফতি অপেক্ষা বলিফার উজির হয়ে থাকা উত্তম। পরিস্থিতির চাপে পড়ে আলি রা. চতুর্থ খলিফার পদ পূরণ করেন। হিজরী ৩৫ এর ২৫ জিলহজ শুক্রবার ২৪ জুন, ৬৫৬ খৃষ্টাব্দ খেলাফতির দায়িত্বভার গ্রহণ করে মসজিদে নববীতে জুমার নামাজে ইমামতি করেন।

এক বছর মত মদিনায় থেকে ইসলামী সাম্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি ইরাকের কুফাতে নিয়ে যান। উসমান রা. হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে বসরায় আয়েষা, তালহা, জুবায়ের সৈন্য জমায়েত করলে খলিফা আলি রা. বাধ্য হয়ে মুখোমুখী সংঘর্ষে অবতীর্ণ হন এবং ৩৬ হিজরী সনের এই যুদ্ধে বিদ্রোহীদের পরাজীত করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই বোধ হয় প্রথম ও একমাত্র শাশুড়ী জামাই-এর মুখোমুখী যুদ্ধ। এই যুদ্ধকে উষ্ট্রীর যুদ্ধ বলে (জংগে জামাল)। আয়েষা রা. একটা উটের পিঠে চেপে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। যুদ্ধে তালহা ও জোবায়ের নিহত হলে আয়েষা রা. কে খলিফা সসম্মানে তাঁর ভাই ও অন্যান্য ৪০ জন বিখ্যাত মহিলার সংগে মদিনায় পাঠিয়ে দেন।

ধুরন্ধর কূটকৌশলী ছিলেন মাবিয়া। বারবার বলা সত্ত্বেও মাবিয়া সিরিয়ার শাসক হয়ে খলিফা আলির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেননি। অবশেষে আলি ও মাবিয়া সৈন্য ফোরাত নদীর তীরে সিফফিন প্রান্তরে মুখোমুখি হয়। মাবিয়া কূটকৌশলী আমরের কথানুযায়ি বর্শার মাথায় কোরআন তুলে কোরআন মাফিক বিচারের দাবী করে যুদ্ধ স্থগিত করেন।

মাবিয়ার পক্ষে আমর বিন আস আর আলির পক্ষে আবু মুসা আশআরী সালিশী বসলে একদল মানুষ এ সালিশীকে না মেনে আলির দল ছেড়ে চলে যায়। এদের খারেজী বলা হয়। এরা ১২০০০ সৈন্য একত্রিত করে বলে, মানুষের বিচার মানি না। আল্লাহর বিচার চাই। লা হুকমা ইল্লাহলিল্লাহ, খারেজী অর্থ One who secedes। এরা হারুরীয় নামেও খ্যাত। কারণ হারুরা নামক গ্রামে একত্রিত হয়ে এরা আলির বিরুদ্ধে রব তুলেছিল। ৬৫৮ খৃষ্টাব্দের ১৭ জুলাই নাহরাওয়ানে আলি সৈন্য খারেজীদের মুখোমুখী হলে খারেজীরা পরাজীত হয়। কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয়নি।

উল্লেখ্য, মুসলমানের তরবারীতে মুসলমানের রক্তপাত আলি রা. আমলে (যুদ্ধক্ষেত্রে) ঘটে। প্রথমে উটের যুদ্ধে ১২০০০ মানুষ মারা যায়। পরে সিফফিনের যুদ্ধে।

আলি রা. কুফায় ফিরে গেলেন। খারেজীরা শুধুমাত্র আলির বিরুদ্ধে নয় আমর ইবনে আস, আলি রা. ও মাবিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করল। কিন্তু মাবিয়া ও আমর ইবনে আস ঘটনাক্রমে বেঁচে যান কিন্তু ভোরের আজানের পরে আমিরুল মোমেনিন হজরত আলি রা. যে মুহূর্তে বাড়ি থেকে ফজরের নামাজের জন্য বের হলেন সে মুহূর্তে আব্দুর রহমান ইবনে শাবির রাজ্য তোমার নয় আল্লাহর বলে তরবারী চালায় কিন্তু তা ব্যর্থ হয় এর পর মুহূর্তে আব্দুর রহমান ইবনে মুলজামের তরবারীর আঘাত কপালে লেগে মাথা পর্যন্ত চলে যায়। মুগীরা আততায়ীকে ধরে ফেলে। এবং মাটিতে আছাড় মারে। তিনদিন পর ৪০ হিজরী সনের ১৭ রমজান ২৪ জানুয়ারী ৬৬১ খৃষ্টাব্দ ৬৩ বৎসর বয়সে চতুর্থ খলিফা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। কুফার জামে মসজিদের সামনে দারুল ইমারতে তাঁকে দাফন করা হয়। এর বর্তমান নাম মাশহাদ আলি। হজরত আলি রা. দ্বারা নবী বংশ আজও বিদ্যামান।

সুন্নীদের মতে আলি রা. ৫৮৬টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে ২০টি বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম একমত। বুখারী ন'টি ও মুসলিম ১৫টি হাদিস গ্রহণ করেছে।

মদিনায় আলি রা. মতামত গৃহীত হত। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। ক্ষুধার যাতনা দূর করার জন্য পেটে ভারী পাথর বাঁধতেন। দানের হাত ছিল প্রশস্ত। পৃথিবী ছিল তাঁর কাছে ঘৃণিত।। তিনি বলতেন, দুনিয়া গলিত মাংস সদৃশ। যে এর অংশ প্রার্থী সে কুকুরের সংগে বসতি করতে সন্তুষ্ট। মৃত্যুকালে তিনি মাত্র ৬০০ দিরহাম রেখে যান। শিয়ারা আলি রা. কে অলিআল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু নামে অভিহিত করেন। অর্থাৎ তিনি আধ্যাত্মিক বন্ধনে আল্লাহর সংগে সম্পৃক্ত। শিয়াদের মতে মুহাম্মদ স. শুধু নবী ছিলেন। কিন্তু আলি রা. সত্তায় ইমাম, যোদ্ধা ও দরবেশ তিন প্রকৃতির মিলন ঘটেছিল।

শিয়ারা আলি রা.কে নিম্নোক্ত উপাধি ও গুণবাচক নাম দ্বারা ডেকে থাকেন। মুরতাদা (আল্লাহ যার প্রতি সন্তুষ্ট) হায়দার (সিংহ) হায়দারই কাররার (পুণঃ পূণঃ আক্রমণকারী প্রচণ্ড সিংহ) আসাদুল্লাহ আল গালিব (আল্লাহর বিজয়ী সিংহ) শের-ই খোদা (আল্লাহর সিংহ) শাহ-ই-ওলায়াত (আল্লাহর বন্ধুদের রাজা) শাহ- ই-আওলিয়া (দরবেশদের রাজা)।

অতি উৎসাহী শিয়াদের মতে, আলি আল্লাহর অবতার। তাঁদের বিশ্বাস আল্লাহ আলির দেহাভ্যান্তরে প্রবেশ করে হজরত মুহাম্মদ স. এর জামাতারূপে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এই সম্প্রদায় পারস্যে আলি ইলাহী নামে পরিচিত।

ব্যক্তিগত জীবনে আলি রা. শারীরীক দিক দিয়ে মধ্যম আকৃতির মানুষ ছিলেন। শরীরের রং ছিল গমের মত। বড় বড় চোখ। হাস্যোজ্জ্বল মুখ। চওড়া বুক। লম্বা দাড়ি। মাথার চুল মুড়াতেন।

রসুল কন্যাকে ২৩ বছর বয়সে বিবাহ করেন। রসুল কন্যা ফতেমা বেঁচে থাকাকালিন কোন অন্য মহিলার পাণি গ্রহণ করেননি। ফতেমার গর্ভজাত তিন পুত্র সন্তান হজরত হাসান, হজরত হোসায়েন, হজরত মোহসেন রা.। দুই কন্যা জয়নব ও ওম্মে কুলসুম। মোহসেন শিশু অবস্থায় মারা যায়। ওম্মে কুলসুম বিবাহ করেন হজরত ওমর ফারুক রা. কে। হজরত হোসায়েনের পুত্র দ্বারা রসুল স. এর রক্ত আজও বহমান অর্থাৎ সৈয়দ বংশ।

হজরত মুহাম্মদ স. ও ফতেমার এন্তেকালের পর হজরত আলি রা. একাধিক বিবাহ করেন। তাঁদের গর্ভেরও সন্তান ছিল।

হজরত মুহাম্মদ স. আলি রা. সম্বন্ধে বলেন, 'আমি জ্ঞানের শহর আলি তার তোরণ দ্বার।' সাধারণতঃ যাঁরা মহাবীর হন তাঁদের বিদ্যাবুদ্ধি ও জ্ঞান খুব প্রখর হয় না। কিন্তু ব্যতিক্রম বহু আছে যেমন বাবর, তেমনি হজরত আলি রা.। আলি রা দেওয়া খোতবা, বক্তৃতামালা, চিঠিপত্র, দৌতকার্য, কবিতা ও বাণী আজ পর্যন্ত যতটুকু পাওয়া গেছে তা থেকে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য, বিদ্যাবত্তা এবং কবিত্ব শক্তির বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। হজরত আলি রা. যদি খলিফা না হয়ে, মহাবীর না হয়ে কেবল সাহিত্য চর্চা করতেন তাহলেও পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকতেন। আজও (২০০০ খৃষ্টাব্দ) তাঁর কবিতা প. ব. মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ ও প. ব. মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের আরবী সাহিত্য সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। 


→ আলি রা. জীবনের টুকিটাকি

• আলি রা. এমন বীর ছিলেন যে তাঁর তরবারীর সামনে দাঁড়াবার ক্ষমতা কারো ছিল না, এমন কি মাবিয়া পর্যন্ত। তিনি বলতেন, পৃথিবীতে এমন কোন বীর নেই যার সামনে দাঁড়াতে আলি ভয় পায়। কিন্তু এই মহাবীর আলি আজানের আওয়াজ শুনলে ভয়ে কাঁপতেন। একদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি স্বাভাবিক অবস্থায় হাসেন, কথা বলেন, সারাক্ষণ আপনাকে স্বাভাবিক মনে হয় কিন্তু যেই আজান হয়, আপনি কাঁপতে শুরু করেন কেন? আলি রা. বলেন ভয়ে। এখনই আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। • আলি রা. মত নামাজে একাগ্রতা কে দেখাতে পেরেছে? একবার এক যুদ্ধে তাঁর পায়ে এক তির বিদ্ধ হয়ে যায়। তিরটাকে বের করতে গেলে তিনি যন্ত্রাণায় ছটপট করতে থাকেন। টেনে বের করা সহা করতে পারছিলেন না। সেখানে মুহাম্মদ স. উপস্থিত হয়ে বললেন, অপেক্ষা কারো আলি নামাজে দাঁড়ালে সে সময় তিরটাকে বের করে নেবে। তাই হল। আলি রা. নামাজে রত হলেন। সে সময় একজন তাঁর পায়ে বিঁধে থাকা তিরটাকে টেনে বের করে নিলেন। নামাজ পড়ে অলি রা. অবাক। পায়ে আর তির নেই তির টেনে বের করা হয়েছে। তিনি অনুভবই করতে পারেননি।

• আলি রা. তখন খলিফা। খলিফা মুসলিম সাম্রাজ্যের। ভর দুপুর। সূর্য তার সর্বক্ষমতা নিয়ে তখন কিরণ দিচ্ছে। এক বৃদ্ধা উত্তপ্ত বালির ওপর বসে আছে। পাশে আছে একটা বোঝা। কাঠের বোঝা। ক্লান্ত বুড়ি। কাঠের বোঝা বহনের ক্ষমতা নেই। আলি রা. এ অবস্থা লক্ষ করে পায়ে পায়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, মা, চলুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই। বুড়ি ত অবাক। অবাক পৃথিবী। এমন মানুষও আছে! আলি নিজ মাথায় তলে নিলে কাঠের বোঝা। এক হাতে ধরলেন বড়িকে। ধীরলয়ে পা ফেলে পৌঁছে গেলেন বাড়ি। কুঁড়েঘর। ঘরের পাশেই রান্নার জায়গা। বুড়ির নির্দেশ মত কাঠের বোঝা নামালেন। বুড়ি নিজের ছেলের মত মনে করে বলল, বাবা এতই যখন করলে, চুলাটা একটু ধরিয়ে দাও। আলি রা. তাই করলেন। বুড়ি খুশী। খুশী আল্লাহ। এবার আলি পা বাড়ালেন বাড়ির দিকে। রেখে গেলেন এক আদর্শ। বীর তিনি ত শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নন। আদর্শে, চিন্তায়, কর্মে, ত্যাগে।

• মহাবীর আলি রা. খাদ্য খাবার ছিল অতি সাধারণ। এমন কি যখন তিনি খলিফা। ইবন আবু রাফি যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহ কি আপনাকে ভাল খাদ্য গ্রহণে নিষেধ করেছেন। জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যে খাদ্য পায় ও খায় আমিও সেই খাদ্য গ্রহণ করি। যদি তাদের অবস্থার উন্নতি করতে পারি, তারা যে খাদ্য খাবে আমিও সেই খাদ্য খাব। • একবার আলি রা.কে জিজ্ঞাসা করা হল, আচ্ছা বলুন ত পূর্ব থেকে পশ্চিমের দূরত্ব কত। সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিমান আলি রা. বলেন, সূর্যের একদিনের ভ্রমণ।

• শ্বশুর হজরত মুহাম্মদ স. ও জামাতা আলি এক পাত্রে আরবের সুস্বাদু ফল খেজুর খাচ্ছেন। নবীজী খেতে খেতে খেজুরের দানাগুলো আলি রা. অগোচরে আলি রা. কোলের দিকে রেখে দিচ্ছেন। খাওয়া শেষ করে নবীজী বললেন, যার পাতে বেশী দানা সে নিশ্চয় বেশী খেয়েছে। এ নির্দোষ কৌতুক আলি রা. উপভোগ করে বললেন, না হুজুর যিনি দানা সমেত খেয়েছেন, তিনি অধিক খেয়েছেন, আমি ত দানা ফেলে খেয়েছি। রসুল স. মুচকি হাসলেন।

• আলি রা. কাছে এক আরব দলপতি এসে জানাল হে খলিফা, হজরত আবু বকর, ওমর রা. খেলাফতিতে দেশে শাস্তি ছিল কিন্তু ওসমান, গদি রা ও আপনার সময়ে এত অশান্তি কেন? একথা শুনে আলি রা. বললেন, আবু বকর ও ওমর রা. সময়ে তাদের সাহায্য করেছি ওসমান গণি ও আমি স্বয়ং। আর আমাদের খেলাফতে সাহায্য করছ তোমরা। কোন ভাল ও ভদ্রলোকের সাহায্য পাইনি।

• মল্লযুদ্ধে শত্রুকে কাবু করে তার বুকের ওপর তরবারী হাতে বসে পড়েছেন। কিন্তু শত্রু তার গাল থেকে একগাল থুথু বীর কেশরী আলি রা. মুখে ছিটিয়ে দিল। আলি রা. রাগে গরগর করতে করতে তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলতে চাইলেন। কিন্তু মনে ভাবান্তর এল। শত্রুকে ছেড়ে দিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল ছেড়ে দিলেন কেন? বললেন, আলি ইসলামের জন্য আল্লাহর জন্য লড়াই করে। কিন্তু যখনই ও আমার গালে থু থু দিয়েছে তখন আমার রাগ হয়েছে এ অবস্থায় যদি মারি তা হবে ব্যক্তি স্বার্থে মারা তাই ওকে আমি ছেড়ে দিলাম।

আব্দুর দার

আব্দুস সামস

উমাইয়া

আলি রা. বংশ তালিকা

ইব্রাহিম

ইসমাইল

আদনান

মাআদ

ফিহির (কোরায়েস)

কুসাই

আব্দুল মান্নাফ

হাসিম

আব্দুল মোত্তালিব

হারব

আব্বাস আবু লাহাব আবু তালিব আবুল্লাহ হামজাহ হারেস

I

আবু সুফিয়ান

↓ মোয়াবিয়া

এজিদ

↓ আলি

হাসান হোসায়েন ফতেমা

আলি রা. কবি হিসাবে যে উপদেশ বাণী রেখে গেছেন তা আজও সাধারণ মানুষকে উদ্দিপ্ত করে।

“হে হোসায়েন, তুমি উপদেশ নাও। আমি উপদেশ দানকারী ও শিষ্টাচার শিক্ষাদাতা, সুতরাং তুমি অনুধাবন কর, নিশ্চয় জ্ঞানী ব্যক্তিরাই শিষ্টাচারী হয়। হে আমার পুত্র, নিশ্চয় জীবিকা খোদার দায়িত্বাধীন, সুতরাং তুমি যা (জীবিকা) অন্বেষণ কর, তাতে সৎপন্থা অবলম্বন কর। তুমি কেবলমাত্র ধনসম্পদকে তোমার অর্জিত বস্তু কোরো না, বরং আল্লাহর ভীতিকেও তোমার অর্জিত কোরো। আল্লাহ প্রত্যেক সৃষ্টি জগতের জীবীকার দায়িত্ব নিয়েছেন। ধনসম্পদ ক্ষণবস্তু স্বরূপ, সে আসে ও যায়। খাদ্য খাবার দৃষ্টিকারীর, দৃষ্টিপাত অপেক্ষা দ্রুতগামী হয়ে পৌঁছায় যখন আল্লাহ কোন মানুষের প্রতি রেজেকের ইচ্ছা করেন, রেজেক সৃষ্টি করেন। হে বৎস, নিশ্চয় কোরআনে বহু উপদেশ আছে, কিন্তু উপদেশ দ্বারা কতজন সংশিক্ষা লাভ করেছে?

০ আলি রা. উপাধি-

• আবু তোরাব (ধূলির পিতা)

• আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ) • শেরে খোদা

• আবুল হাসান

আল্লাহর বাঘ • করমুল্লাহ অজহু • চতুর্থ খলিফা

০ আলি রা. কিছু বাণী ও উপদেশ—

• ধর্ম একটা বৃক্ষের মত, এর মূল হল বিশ্বাস, শাখা আল্লাহর ভয়, ফুল নম্রতা আর ফল হৃদয়ের ঔদার্য।

• মানুষের উপকার করেই জাতিকে শাসন করা যায়।

• দুঃখীর প্রতি করুণা দেখালে নিজের প্রতিও নেমে আসে করুণা।

• লোভ অর্থ, চিরস্থায়ী গোলামী।

• যে লোভ লালাসার চর্চা করে সে নিজের পতন ডেকে আনে।

• যে নিজের দারিদ্র আর দুর্ভোগের কথা সব সময় বলে বেড়ায় সে সব সময় অপমানিত হবেই।

• অন্যের বিচার না করে যে নিজের বিচার নিজেই করে, সে সবচেয়ে সুবিচারক।

• মানুষের মন বনের পাখির মত, যারা তাকে ভালবাসে আর সুশিক্ষিত করে তোলে তাদের সংগে সে ঘনিষ্ট হয়ে থাকে।

• অনেক সময় কথা আর মনের ভাব মনের গোপন কথা ফাঁস করে দেয়। 

• সত্য ত্যাগ করা মানে চির ধিক্কার অর্জন করা।

• অলস আর নিষ্কর্মারা নিজের নায্য পাওনা আর অধিকার হারাতে বাধ্য। 

• যে যতই বিজ্ঞতর হয়, সে ততই হয়ে ওঠে স্বল্পভাষী।

• আল্লাহকে ভয় কর তাহলে আর কাউকে ভয় করতে হবে না।

• তোমার পিতাকে ইজ্জত কর তাহলে তোমার ছেলেও তোমাকে ইজ্জত করবে। 

• তুমি অনর্থক ভাগ্যের পিছনে ধাওয়া কোরো না, ভাগ্যই তোমাকে খুঁজে নেবে। নিজের সম্বন্ধে নিজের আত্মতুষ্টি (আত্মসন্তুষ্টি) স্রেফ নিজের বিকৃত উপলব্ধির ফল।

• নম্র ব্যবহারে বাড়ে ইজ্জত, কৃতজ্ঞতায় বাড়ে সমৃদ্ধি।

• সৎশিক্ষা জন্ম দেয় মার্জিত স্বভাব, উদারতা জন্ম দেয় প্রেম

• সিংহের থেকে পলায়নের চেয়েও নিজের থেকে পলায়ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

 • আল্লাহর ভয়ে কান্না, হৃদয়কে উজ্জ্বল করে।

• যারা কেবল আল্লাহর দয়া পাবার জন্য আরাধনা করে তারা বণিকের মত আল্লাহর সংগে ব্যবসা করে।

• যারা আল্লাহর গজব থেকে বাঁচার জন্য তাঁর আরাধনা করে তারা ক্রিতদাস তুল্য। 

• যারা কৃতজ্ঞতার বশবর্তি হয়ে আল্লাহর উপাসনা করে এরা ভদ্র ও উত্তম। 

• যা জান না সে সম্বন্ধে তোমার অজ্ঞতা প্রকাশ করতে লজ্জিত হয়ো না।

 • যদি কিছু না জান তা শিখতে লজ্জিত বোধ করো না।

• দেহের সংগে মাথার যে রকম সম্পর্ক ইমানের সংগে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সম্পর্কও সে রকম।

• মাথা ছাড়া যেমনি দেহের কোন মূল্য নেই, তেমনি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ছাড়া ইমানও মূল্যহীন।

• ধৈর্য আত্মীয় তুল্য।

• ফরজ অবহেলা করে নফলে জোর দিলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয় না।

• মানুষ জিভের নীচে আত্মগোপন করে।

• সৎ বন্ধু হারানো মানে নিজ দেশে পরবাসী হওয়া।

• আত্মদমন সর্বাপেক্ষা বড় জেহাদ।

• শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ হয়ে আছে, কেবল জ্ঞানীদের জন্য।

• সৎ কাজের ইচ্ছা করলে সত্ত্বর কর।

• নারী মনোহর বেশে সজ্জিত বিছা স্বরূপ।

• প্রত্যেক ক্ষতের ঔষধ আছে কিন্তু খারাপ স্বভাবের ঔষধ নেই।

• ধর্মভীরুতা মহৎ গুণাবলীর নেতা।

• হৃদয় চক্ষুর গ্রন্থ।

• যখন জ্ঞান পূর্ণতা লাভ করে তখন মানুষ হয় স্বল্পভাষী।

• দাতা হও অপচয়ী হয়ো না, মিতব্যয়ী হও কৃপণ হয়ো না।

• মুসলমান অমুসলমান সকলের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, মুসলমান তোমার ভাই, অমুসলমান তোমার মত মানুষ।

হজরত আলির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হাসান খলিফা হন। রাজনীতি ও সমরনীতিতে তাঁর কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। সিরিয়ায় শাসক এই সুযোগ গ্রহণ করলেন। মাবিয়া ইরাক আক্রমণ করলেন হাসান কায়েমের পরিচালনায় ১২০০ সৈন্য নিয়ে আগিয়ে গেলেন। কায়েম এখন বিপুল বিক্রমে যুদ্ধে রত ধূর্ত মাবিয়া কায়েমের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে দিল। কায়েমের মৃত্যু সংবাদ যুদ্ধের গতি বদলে গেল। ইমাম হাসান যুদ্ধে গতি বুছতে পেরে মাবিয়ার কাছে আপস প্রস্তাব দিল। শেষ পর্যন্ত একটা আপোষ চুক্তি সাক্ষর হল। চুক্তি অনুযায়ী হাসান মাবিয়ার অনুকূলে খলিফা পদ ত্যাগ করলেন। সন্ধির অন্য শর্ত

• ইমাম হাসান পরিবারের জন্য বৎসরে ৫০ লক্ষ দিরহাম ভাতা দেওয়া হবে। 

• এ ছাড়া ইমাম হাসান পারস্যের রাজস্ব ভোগ করবেন।

• নামাজের খোৎবায় হাসানের পিতা আলি রা. প্রতি অভিসম্পাদ বন্ধ করা হবে। 

• মাবিয়ার মৃত্যুর পর হাসানের ছোটো ভাই হোসায়েন খলিফা হবেন । খাইয়ে মারা হয়। আর কথা খেলাপ করে মাবিয়া নিজ পুত্রকে খেলাফতির এই শর্ত মেনে হাসান রা. মদিনায় চলে যান সেখানে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে বিষ

আসনে বসান।


0 Reviews