Read more
রোম্যান্টিসিজম (Romanticism) : রোম্যান্টিসিজমের তাৎপর্য বিশ্লেষণ
রোম্যান্টিকতার কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই—কোন একটি বিশেষ বাক্যের দ্বারা এর স্বরূপ বিশ্লেষণ করা যায় না। রোমান্টিকতা একটি বিশেষ নান্দনিক ধারণা যা পূর্ববর্তী কোন যুগ বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে উদ্ভূত হয়েছিল। বহু অর্থবোধক ও বহুমাত্রিক এই শব্দটি বহু সময় ব্যাপী বিবর্তনের ধারায় বিকশিত হয়ে ওঠে বলেই কোন দেশ ও কালের সীমায় এর অর্থ সীমাবদ্ধ নয়। একজন আমেরিকান পণ্ডিত A. O. Lovejoy বিশেষণরূপে রোম্যান্টিক শব্দটির বিশেষায়িতকরণের দীর্ঘ তালিকা দেখে বলেছেন, 'It means nothing at all. The
variety of its actual and possible meaning and connotation reflect the com-
plexity and multiplicity of European romanticism." Burxun রোম্যান্টিক শব্দটির প্রতিশব্দ রূপে ব্যক্তিগত চাহিদাবোধক শব্দের একটি তালিকাও প্রস্তুত করেছেন। Bloomsbury তাঁর ‘Guide to English Literature'-এ রোম্যান্টিকতার বিকাশের স্তর সম্বন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে মধ্যযুগে এই শব্দটি ল্যাটিন হতে ভাষান্তরিত হয়ে যে কোন মানবিক সৃষ্টিকর্মকে বিশেষায়িত করত। Friedrich Schlegal ই সর্বপ্রথম রোম্যান্টিক শব্দটিকে শিল্প ও সাহিত্যের সঙ্গে যুক্ত করেন এবং August রোমান্টিক সাহিত্যের স্বরূপ বোঝাতে ক্লাসিসিজমের বিপরীত প্রবণতাকে নির্দেশ করেছেন। ক্লাসিসিজম বা নিও-ক্লাসিসিজমের কঠোর নিয়মানুবর্তিতাকে অস্বীকার করে, ব্যঞ্জনা, ইঙ্গিত ও কল্পনার অবাধ স্বাধীনতার দ্বারা এক অনুভববেদ্য সৌন্দর্যলোক সৃষ্টির বাসনাই রোম্যান্টিক নন্দন ভাবনার মূল উদ্দেশ্য। রচিত কমেডি নাটকের মধ্যে মাত্র ১১ খানি নাটক পাওয়া যায় যার মধ্যে 'Birds' কমেডিটি সর্বশ্রেষ্ঠ। এরপরে নব্য কমেডির স্রষ্টা মিনান্ডার (Menander -- 342-290 BC)। মীনান্ডারের নাটক পৌরাণিক নয়, সামাজিক। প্রাচীন গ্রীসের পরেই রোমের অভ্যুত্থান। এ যুগের বিখ্যাত ক্লাসিক মহাকাব্য রচয়িতা হলেন ভার্জিল ও ওভিড। ট্রাজেডি রচয়িতা হলেন সেনেকা (Seneca)। তিনি 'blood- thirsty Revenge'-এর স্রষ্টা এবং তাঁর নাটকগুলির মধ্যে বিখ্যাত হল 'Hercules Furens', 'Oedipus',
'Thyestes' ইত্যাদি। কমেডি রচয়িতাদের মধ্যে রয়েছেন প্লটাস (Plautus) এবং তাঁর বিখ্যাত নাটক 'Miles Gloriosus' ও 'Menaechmi’ এবং ‘Heautontimorumenos' এবং ‘Andria' নাটকের রচয়িতা টেরেন্স (Terence)। অগাস্টাসকে কেন্দ্র করে যেমন প্রাচীন রোমের স্বর্ণযুগে ক্লাসিক সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল, তেমনভাবেই দান্তের ‘ডিভাইনা কমেডিয়া’-কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল ইটালির ক্লাসিক যুগ। ফ্রান্সে চতুর্দশ লুই-এর রাজত্বকালকে বলা হয় ফরাসী ক্লাসিক যুগ। সপ্তদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে অ্যারিস্টোটলের ‘The Idea of Poetry as Imitation', কবি হোরেস এর ‘Ars Poetica' এবং Longinus-এর ‘On the sublime' সম্পূর্ণ নতুনভাবে লেখক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান ধ্রুপদী সাহিত্যের কয়েকটি লক্ষণকে তাঁরা বিশেষভাবে অনুকরণযোগ্য বলে মনে করলেন। ত্রিসাম্য ঐক্য, আঙ্গিক ও প্রকরণের উৎকর্ষতা, ঐতিহ্যের অনুবর্তন, সংযম ও শৃঙ্খলা এবং রচনারীতির আভিজাত্য প্রভৃতি ক্লাসিক লক্ষণগুলি তাঁদের রচনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠল। J. C. Sealiger তাঁর ‘Poetices Libri Septem'-এ যা বলেছেন, P. Vettori, Castelverto এবং Robertelli-ও একই কথা বললেন। অনুকৃতি তত্ত্ব ও ঐক্যসূত্র সপ্তদশ শতাব্দীর ফ্রান্সে সাহিত্যসৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠল এবং এই যুগ পরিচিত হল ‘Neo-classical' বা নব্য ধ্রুপদী সাহিত্যের যুগ রূপে, যে আন্দোলনের প্রধান হোতা ছিলেন Longius-এর ‘On the Sublime'-এর অনুবাদক Boileau। ফরাসী সাহিত্যে এই নব্য ধ্রুপদীযুগে ট্রাজেডি রচনা করলেন Pierre Corneille, Jean Racine এবং Voltaire, কমেডি রচনা করলেন Moliere এবং Jean de la Fontaine লিখলেন ফেবল। জার্মানিতে নিও ক্লাসিসিজম এল ফ্রান্সের অনুসৃত নীতিকে অস্বীকার করে। Aristotle- এর Poetics-এর ত্রিসাম্য ঐক্য তাঁরা গ্রহণ না করে 'Purgation of Pity and fear' তত্ত্বের উপর গুরুত্ব দিলেন। জার্মান সাহিত্যে নব্য ধ্রুপদী লেখকরূপে যাঁরা উঠে এলেন তাঁদের মধ্যে আছেন J. W. V. Goethe Friedrich Schiller এবং মূলত Friedrich Holterlin | নতঃ German Cult of Greek Form গড়ে ওঠার পিছনে Friedrich Nietsche গ্রহণ করেছে, গীক ট্রাজেডির Apollonian-Dionysian এর উপাদান এবং Stefan George এবং Rainer Maria Rilke এর অবদান ইংলন্ডের প্রথম এপিক ওল্ড ইংলিশ পিরিয়ডে অ্যাংলো স্যাক্সন জাতির ‘Beowulf”। Prologue দিয়ে আরম্ভ এই heroic Poem King Alfred এর Prototyy”। এর সমাপ্তিও আভিজাত্যপূর্ণ। তবু একে ঠিক ক্লাসিক রচনা বলা যায় না। যেমন বলা যায় না শেক্সপিয়রের রচনাকে। এখানে heroic adventure, magnificent
imagination প্রাধান্য পেয়েছে। মিল্টন কিন্তু ক্লাসিক কবি। তাঁর ‘Paradise Lost' নিঃসন্দেহে ক্লাসিক মহাকাব্য যদিও এর চিন্তার ব্যাপকতায় কিছুটা নিওক্লাসিক ধর্মী। মহাকাব্যের গঠন সৌকর্যে তিনি হোমার ও ক্ল্যাসিসিজম ভার্জিলের অনুগামী, কিন্তু ভাষা ও চিত্রধর্মিতায় তিনি স্পেনসারের ‘ফেয়ারি কুইন'কে অনুসরণ করেছেন। Aristo, Tasso, ovid, Lucretius
Guillaume— সকলের ‘intellectual endeavour-কে নিজের 'Literacy experience'-এর সঙ্গে যুক্ত করে মিল্টন “Paradise Lost'-এর মূল উপজীব্য বিদ্রোহকে সপ্তদশ শতাব্দীর পাঠকের দরবারে হাজির করলেন। এই বিদ্রোহ একদিকে যেমন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শয়তান ও তার অনুচরবৃন্দের, তেমনি ঈশ্বরীয় নীতির বিরুদ্ধে আদম ও ইভেরও। কাহিনীর বিস্তৃতি বিশ্ব ও ব্রহ্মাণ্ডব্যাপী, ঘটনার ঐক্য, মহান চরিত্রসমূহ গ্রীক পদ্ধতির অনুক্রম। এ কাব্যের বলিষ্ঠনীতি হল “To justify the ways of God to
men." I মিল্টনের স্যামসন্ অ্যাগেনিস্টস (Samson Agonistes)-এ গ্রীক ট্রাজেডির পদাঙ্ক অনুসৃত হয়েছে, যদিও স্যামসন চরিত্র মিল্টনেরই অন্তরসত্তা। মিল্টনের ক্লাসিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে রেনেসাঁ প্রবর্তিত মানবতাবাদের যে প্রতিফলন তাঁর মহাকাব্য ও কাব্যনাটকে প্রতিফলিত হয়েছে, নব্য ধ্রুপদী আন্দোলনের ভাবধারা তারই প্রাণরসে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে।
শেক্সপীয়রের সমসাময়িক কালেই বেন জনসন রোম্যান্টিকতার বিরুদ্ধে রুঢ় বাস্তবকে আশ্রয় করে গ্রীক পদ্ধতি অনুসারে নাটক রচনা শুরু করেন। মনেপ্রাণে তিনি ক্লাসিকপন্থী হলেও, তাঁর নাটক একটি বিশেষ শ্রেণীর, যাকে বলা হয় কমেডি অব হিউমারস্। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীতে ড্রাইডেন, পোপ এবং জনসনের যুগে ক্লাসিক্যাল সাহিত্য নাম দিয়ে রচনার প্রবণতা সৃষ্টি হল, তার মধ্যে মানবমনের গূঢ় রহস্যজটিলতা অন্তরের দোলাচলতা তেমনভাবে ফুটে উঠল না, পক্ষান্তরে জীবনের বাহ্যিক দিক, সামাজিক নিয়মনীতি, প্রাতিষ্ঠানিক বাহ্যাড়ম্বরের চিত্রই রূপায়িত হল।"It refers to the critical,
intellectual spirit of many writers, to the fine polish of their heroic
couplets or the elegance of their prose, and not to any resemblance which their
works bear to true classic literature." এর ফলে অগাস্টান যুগে ক্লাসিক আন্দোলনের নামে সৃষ্টি হল Pseudo-classic বা Neo-classic যুগ। রেস্টোরেশান যুগের ড্রাইডেন থেকে এ যুগের আরম্ভ এবং অগাস্টান যুগেই এর পরিসমাপ্তি। ড্রাইডেনের Annus Mirabilis', Alsatom and
Achitophel কাব্য, বীররসের ট্রাজেডি The conquest of Granada, All for
love, রেস্টোরেশান যুগের রচনা হলেও নিওক্লাসিক লক্ষণাক্রান্ত। অগাস্টা। যুগের মূল নায়ক আলেকজান্ডার পোপ লিখেছেন ব্যঙ্গকাব্য 'The Rape of the Lo এবং ‘The Dunciad'। এছাড়াও হোরাসের অনুকরণে লিখেছেন Odes, Satire এবং Epistles। তিনি সমগ্র ইলিয়াড ও ওডেসির অর্ধাংশ অনুবাদ করেছেন। ‘The Essay on Criticism'-এ হোরাস, বলিউ (Boileau) প্রমুখ সাহিত্য নীতিপ্রণেতার ‘art of Poetry' সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। পোপের রচনা যেমন নব্য ধ্রুপদী সাহিত্যের নিদর্শন, তেমনই হল ...rathan Swift-এর Tale of a Tub এবং Gulliever's Travel's। এ দুটিই স্যাটায়ার। এছাড়াও নিও ক্লাসিসিজমের প্রতিনিধিত্ব করেছেন অ্যাসিান, স্টিল, বার্ক, জনসন এবং ঔপন্যাসিক হেনরি ফিল্ডিং। নিও-ক্লাসিসিজমকে এক কথায় বলা যায় ‘Renaissance of classical culture'- ক্লাসিক। কিন্তু মহাকাব্যের পরিণাম অশ্রুজল। ট্রাজিক রস করুণ রসসাগরে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত। আসলে রাবণ চরিত্র অঙ্কনে মধুসূদন মিল্টনের শরণাপন্ন হয়েছেন। মিল্টনের 'প্যারাডাইস লস্ট'-এর শয়তানের আদলে তিনি রাবণ চরিত্র এঁকেছেন, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঊনবিংশ শতকীয় প্রেরণা—যে প্রেরণায় ঘরকুনো, সদাসন্তুষ্ট বাঙালি জাহান্নমের আগুনে বসিয়া 'হাসি পুষ্পের হাসি’—হাসতে চেয়েছিল। মেঘনাদ চরিত্র পরিকল্পনাতেও এই বোধ কাজ করেছে। ভারতীয় পুরাণকে তিনি গ্রীক ও রোমান আদর্শের দৃষ্টিতে দেখেছেন। দেবদেবীরা ভারতীয় ঐতিহ্য পরম্পরার নয়—তারা মানুষের মতোই দ্বেষ, ঈর্ষাও কলহে ব্যাপৃত। ভারতীয় ঐতিহ্যে দেবতারা কখনওই মানুষের সমপর্যায়ভুক্ত নন। গ্রীক বা রোমান প্রভাব এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, কাব্যারম্ভে তিনি হোমার, ভার্জিল, টাসো, দান্তের কাছ থেকে ঋণের কথা স্বীকার করেছেন। প্রথম সর্গ থেকে শেষ পর্যন্ত দু-একটি সর্গ ব্যতীত সর্বত্রই এই পাশ্চাত্য গ্রীক ও রোমান প্রভাব দৃষ্ট হয়। প্রমীলার চরিত্রে টাসো'র আবির্ভাব (La Gerusalemme)-এর ছায়া ১ম সর্গে যেমন আছে, তেমনই মেঘনাদেও আছে রাইনান্ডোর প্রভাব। প্রেতলোকের বর্ণনা ভার্জিলের ঈনিডকে স্মরণ করিয়ে দেয়। অবশ্য মিল্টনীয় প্রভাবও এতে আছে। ড. অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ইলিয়াড ২৪ সর্গের সঙ্গে মেঘনাদ বধের শেষ সর্গের তুলনা করে এই প্রভাবের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। (বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত ৭ম খণ্ড)।
লিরিক বাঙালির স্বাভাবিক কাব্যপ্রবণতা হলেও মধুসূদন চেয়েছিলেন ক্লাসিকের আবরণে বীররসের গান গাইতে; তিনি সচেতনভাবে প্রস্তুত থেকেও মহাকাব্যের বিশাল অবয়বকে অশ্রুসাগরে নিমজ্জিত করেছেন। কারণ, রাবণের জীবনকথা যে তাঁরই জীবনকথা। শ্রদ্ধেয় অসিতবাবু যাকে বলেছেন 'নির্জন নিঃশব্দ কাব্যমূর্তি । তাই মেঘনাদ বধে ক্লাসিকের আবরণের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে লিরিকের মূর্ছনা। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বৃত্রসংহার (১৮৭৭)-কে মহাকাব্য বলা হয়। বিষয় নির্বাচনে মৌলিকতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘স্বর্গোদ্ধারের জন্য নিজের অস্থিদান এবং অধর্মের জন্য বৃত্রর সর্বনাশ—যথার্থ মহাকাব্যের বিষয়। ক্লাসিক রীতি অনুসরণ করে Poetic Justice-কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ইন্দ্র, বৃত্রাসুর, ঐন্দ্রিলা, রুদ্রপীড় প্রমুখ চরিত্র নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। প্রণম্য দেবপদে ভক্তি, শ্রদ্ধা তপর্ণ যেমন ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারী, তেমনই আছে মাতৃভূমি রক্ষায় তৎপর দানবদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম। এ সবই ক্লাসিক রীতি। নবীন চন্দ্র সেনের 'ত্রয়ী' মহাকাব্য — ‘রৈবতক-কুরুক্ষেত্র-প্রভাস'। রৈবতকে সূচনা, কুরুক্ষেত্রে বিকাশ এবং প্রভাসে সমাপ্তি। তিন খন্ড কাব্য তিনটি লীলার সমন্বয়। প্রথমে আছে আদিলীলা, দ্বিতীয়ে মধ্যলীলা এবং শেষেরটিতে অন্তিম লীলা। ভাবতারা শ্রীকৃষ্ণ এ মহাকাব্যের নায়ক। বিষয়বস্তু নিঃসন্দেহে ক্লাসিক। ধর্ম, বিজ্ঞান ও ইতিহাস চেতনার সমন্বয়ে প্রাচীন আদর্শবাদ ‘আর্য-জাগৃতি' ঘটনার ক্রমাবর্তনে মানবমহিমার মহাস্বর্গে উপনীত। ভাগবত গীতা, মহাভারত, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণ চরিত্র' প্রভৃতি পূর্বাপর ও প্রাচীন ঐতিহ্যজাত ভাবপ্রেরণাকে তিনি ইউরোপীয় রেনেসাঁর মানবতাবাদী মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেন। রচনারীতির ক্লাসিক সংযম লিরিকের উচ্ছ্বাসে অনেক ক্ষেত্রেই বাঁধনহারা। মহাকাব্যের যুগ শেষ, শেষ হয়েছে আখ্যান কাব্যেরও। এ যুগ ছোটো কবিতার। প্রাচীন ক্লাসিক রীতির ছাপ বহনকারী কবিতা প্রারই রচিত হয় না, হলেও তা ব্যতিক্রমী। মোহিতলাল মজুমদারের ‘পান্থ' কবিতাটিও এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদাহরণ। শোপেন হাওয়ার-এর দুঃখবাদ ক্ল্যাসিসিজম ও নারীবিদ্বেষী মনোভাবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে 'পান্থ’রূপী মোহি লাল কল্লোলে আত্মঘোষণা করে বললেন, “সুন্দরী সে প্রকৃতিরে জানি আমি মিথ্যা সনাতনী সত্যেরে চাহি না তবু সুদূরের করি আরাধনা”। কখনও বা হইটম্যানের মতোই দৃঢ় প্রত্যয়ী কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “সত্য শুধু কামনাই—মিথ্যা চির মরণ-পি-লা- দেহহীন, স্নেহহীন, অশ্রুহীন বৈকুণ্ঠ স্বপন যমদ্বারে বৈতরিণী, সেথা নাই অমৃতের আশা
ফিরে ফিরে আসি তাই, ধরা করে নিত্য আমন্ত্রণ।”
এ দৃঢ়প্রত্যয়ী কণ্ঠ, এই আত্মঘোষণা—ক্লাসিক কবির জীবন দর্শন।
“নেকড়ের হন্যেয় দেশ ছিন্ন ভিন্ন সন্দেহ ও ভয়/ কলুষ ছড়ায় দুইহাতে গায় শৃগালে বাহবা/ তবুও আকাশ ছায়, আমাদের মুক্তি উচ্চৈশ্রবা; / মানুষ দুর্জয়।/”
0 Reviews