সুররিয়্যালিজম (Surrealism) বা পরাবাস্তববাদ

সুররিয়্যালিজম (Surrealism) বা পরাবাস্তববাদ

Size

Read more



সুররিয়্যালিজম (Surrealism) বা পরাবাস্তববাদ

সুররিয়্যালিজম-এর সংজ্ঞা ধারণা

সুররিয়্যালিজমের বাংলা প্রতিশব্দ পরাবাস্তববাদ বা অধিবাস্তববাদ ১৯২৪ সালে আদ্রে ব্রেতো (Andre Breton) কর্তৃক প্রকাশিত ম্যানিফেষ্টো অন সুররিয়্যালিজম (Manifesto on Surrealism) এর মাধ্যমে সুররিয়্যালিজম মতবাদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘটে, ১৯৩০ এবং ১৯৩৪- আরও দুটি ইস্তাহার প্রকাশ পায় তবে এর আগে ১৯১৭-তে ববি গীয়ম অ্যাপোলেনীয়র ‘Surrealist' শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন এবং কিউবিষ্ট কবি পীয়ের রে ভর্দির কবিতাতেও সুররিয়্যালিজমের ইঙ্গিত ছিল তথাপি ব্রেতোঁই যে এই আন্দোলনের মুখপাত্র, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই এই ভাবধারার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল মানবমনের সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রকাশ এবং মানবমনের উপর ক্রিয়াশীল সমস্ত শৃঙ্খলা এবং বন্ধনের মুক্তি, মানবমনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশকে নিয়ন্ত্রিত পরিশীলিত করে যুক্তি বিশ্লেষণ, সামাজিক প্রথা নৈতিক মূল্যবোধ এবং শিল্প সাহিত্য সম্বন্ধীয় রীতিনীতি প্রবর্তন সুররিয়ালিজমের প্রবক্তারা এইসব নিয়ন্ত্রককে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে মানবমনের গভীরতল থেকে উৎসারিত নিখাদ অনুভূতিকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন তাঁদের মতে এই অনুভূতিই শিল্প জ্ঞানের উৎস তাই তাঁদের মূল লক্ষ্য হল শিল্পকীর্তিতে অচেতন মনের আত্মপ্রকাশ ঘটানো, এবং সেই কারণেই তাঁদের সাহিত্য শিল্পকর্ম আপাত যুক্তিহীন, অসংলগ্ন এবং পারম্পর্যবিহীন

সুররিয়্যালিজম এক অর্থে ডাডাইজম এবং ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানের যুগপৎ বিক্রিয়াজাত এক ভাবধারা একদিকে যেমন ডাডাইজমের নিহিলিষ্ট মতে আস্থা রেখে সুররিয়্যালিষ্টরা সর্বপ্রকারের নিয়ন্ত্রককে অস্বীকার করে সম্পূর্ণ স্বাধীন মনোবৃত্তির প্রকাশকে প্রাধান্য দেয়, অন্যদিকে তেমনই ফ্রয়েডীয় মনস্তত্বের গভীর অনুশীলন করে অবচেতন মনের বিভিন্ন অনুভূতির উদ্ভব প্রকাশভঙ্গির আঙ্গিককেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয় আঁদ্রে ব্রেতো নিজে মনস্তত্বের ছাত্র ছিলেন এবং সে কারণেই ফ্রয়েডীয় মনোবিশ্লেষণ স্বপ্নতত্ত্বে তাঁর পরিপূর্ণ আস্থা ছিল তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানবমনের অবচেতন স্তর সাহিত্য তথা সর্বপ্রকারের শিল্পকর্মকে প্রভাবান্বিত করে এই অবচেতন স্তর যেন এক অধিবাস্তব চেতন (Super reality) লোক, যেখানে স্বপ্ন, কল্পনা, চিন্তা এক সঙ্গে মিশে যায় পরাবাস্তবতা বলতে শিল্পী ম্যাক্স আর্নষ্টও এমনটাই বুঝেছিলেন এবং তিনিও সুররিয়্যালিষ্টদের কাজের লক্ষ্য নির্ধারণে বলেছেন যে মূল লক্ষ্য হল, “to create a super-reality in which real and unreal, meditation and action, meet and mingle." ফ্রয়েড মানবমনকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন : সচেতন বা Conscious এবং অবচেতন বা Unconscious অবচেতন স্তর হল মানবমনের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন অংশ যেখানে সবরকম প্রবৃত্তি (instinct) জন্ম লাভ করে বা উদ্ভব হয় এই স্তরে প্রবৃত্তিজাত অনুভূতিগুলি সর্বদাই সতেজ কোন ব্যক্তির শৈশবাবস্থায় অবদমিত কোন আবেগের অনুভূতি বা প্রবৃত্তি তার বৃদ্ধাবস্থাতেও জাগ্রত সতেজ থাকে সঙ্গত কারণেই এই অবচেতন স্তর প্রবৃত্তি তাড়িত হওয়ায় সেখানে যুক্তি, নীতিবোধ, রীতি প্রভৃতি কোন কাজ করে না, অবচেতন মনের বা স্তরের এই ইচ্ছা বা প্রবৃত্তিকে ফ্রয়েড নাম দিয়েছেন ID (ইড) বা মগ্নচৈতন্যের জগৎ সুররিয়্যালিষ্টরা ফ্রয়েড বর্ণিত এই ইড বা মগ্নচৈতন্যকে শিল্প-সাহিত্যে রূপায়িত করতে চাইলেন কিন্তু অবচেতন স্তর যেহেতু স্বতঃউদ্ভূত এবং সচেতন ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিরপেক্ষ, তাই অচেতন মানসকে আভাসিত করতে যুক্তি শৃঙ্খলামুক্ত এক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির প্রয়োজন সুররিয়্যালিষ্টদের মূল প্রক্রিয়া পদ্ধতিকে তাই বলা হয় Psychological automatism | শব্দটির অর্থ করা হয়েছে “a term used to denote greatest' or 'standard works of literature or Periods of Eminent Literacy develop.ent." Alain Chartier and Jean de Meung-এর প্রদত্ত সংজ্ঞায় 'Standard and model authors' আখ্যা দেওয়া হয়েছে আধুনিক অর্থে ক্লাসিক বলতে আমরা বুঝি;

(i) The Division of Literature, history into "Classic age"-the ages of

highest Poetic achievement rather than of specific literary forms.

(ii) The naming of collections including works of recognised merit. Sainte-Benve, Babbit প্রমুখ সমালোচকও ক্লাসিক সাহিত্য অর্থে 'works of Excellence'-কেই বুঝিয়েছেন T. S. Eliot বলেছেন যে classic হল 'a Product of mature civilization reflected in a mature mind and must show a common style which fully exploits the Possibilies of the language in which the work is composed. A classic should comprehensively represent the spirit of the nationality to which it belongs and have some claim to universal meaning, to dealing with questions of general Philosophical import.' F. Karmode একটু ঘুরিয়ে বলেছেন, 'a classic Text is one admitting a variety of interpretations while still Preserving and underlying essence.' প্রাচীন মহাকাব্য (epic) যেমন ব্যাবিলনের 'Gilgamesh Saga', হোমারের Iliad Odyssey, Hesiod-এর Theogny এবং প্রাচ্যের রামায়ণ মহাভারত, প্রাচীন গ্রীসের ট্রাজেডি কমেডি নাটক যেমন এস্কাইলাস, সফোক্লিস এবং ইউরিপিডিসের ট্রাজেডি অ্যারিস্টোফেনিস এবং মিনান্ডার এর কমেডিকে সাধারণ ভাবে ক্লাসিক সাহিত্য বলা হয়ে থাকে গ্রীক সাহিত্যের পরবর্তীকালীন রোমান সাহিত্যে ভার্জিলের (Virgil)-এর ইনিড (Aeneid, খ্রিঃ পূঃ ৫৫), মেটামরফসিস (Metamorphoses)-এর রচয়িতা ওভিড (Ovid- 43 B.C-17 A.D), Silius Italicus (26- 101 A. D)-এর 'Punica', Statius ( 45-96 A. D)-এর ‘Thebais'-প্রভৃতি ক্লাসিক কাব্য রূপে পরিগণিত Dante (1265-1321)- ‘Divina Commedia', Torquato Tasso' 'Jerusalem Delivered' (1981), Milton- এর প্যারাডাইস লস্ট (Paradise Lost) এবং হার্ডির (Hardy) ডাইন্যাস্টস্ (Dynasts) প্রভৃতিকে বলা হয় সেকেন্ডারি এপিক যা ক্লাসিক সাহিত্যের লক্ষণাক্রান্ত প্রাচীন রোমান লেখক Cicero M. T (106-43 B.C)-এর পথ অনুসরণ করে ক্লাসিক লেখকরূপে পরিচিত হয়েছেন জুভেন্যাল (Decimus Junius Juvenalis) (60-130 A.D) এবং প্লুতার্ক (Plutarch 46-120 A.D) রোমান ট্রাজেডি নাট্যকার সেনেকা (Seneca Lucius Annaeus - 4 B. C 65 A.D) এবং কমেডি নাট্যকার প্লটাস (Plautus Titus Maccius 254-184 B.C) এবং

টেরেন্স (Terence 190-159 B.C) ক্লাসিক সাহিত্য রচয়িতাদের অন্যতম

সংস্কৃত সাহিত্যের কালিদাস, ভবভূতি, ভাস প্রমুখ কবি নাট্যকারের রচনাকেও ক্লাসিক

সাহিত্যে অঙ্গীভূত করা হয়

() হোমার-বাল্মীকি ব্যাসক্লাসিক রচয়িতা কেন

প্রাচীন ক্লাসিক মহাকাব্যের রচয়িতা হলেন পাশ্চাত্যের হোমার এবং প্রাচ্যের বাল্মীকি ব্যাস হোমারের ইলিয়াড ওডেসির সঙ্গে প্রাচ্যদেশেররামায়ণ মহাভারতে' মিল অমিল দুইই আছে, কিন্তু উভয় দেশের মহাকাব্যই ক্লাসিক শাক্রান্ত বলে ক্লাসিকের লক্ষণগুলি উভয় ক্ষেত্রেই এক বা সাদৃশ্যযুক্ত সাধারণ ভাবে ক্লাসিক মহাকাব্যকে বলা হয়;

(i) a narrative or heroic action বা শৌর্য-বীর্য পরাক্রমপূর্ণ দীর্ঘ আখ্যান মহাকাব্যের নায়ক এক বা একাধিক হতে পারে এবং বিষয়বস্তু হবে ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক কোনো যুদ্ধ বা বিজয়কাহিনী ঘটনা বা আখ্যান সরল বাস্তবোচিত এবং কল্পনার জারণে কোনোভাবেই জারিত নয় বিষয় গুরুগম্ভীর হলেও প্রত্যক্ষবৎ এমনকি স্বর্গ দেবতাদের ক্রিয়াকলাপ বর্ণনার মধ্যেও স্পষ্ট প্রত্যক্ষতা বজায় থাকবে ইলিয়াড মহাভারতের বিষয় হল রাজবংশের ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ এবং ওডেসি রামায়ণে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ রাজপুত্রের পত্নীকে এবং রাজ্য ফিরে পাওয়ার কাহিনী

"The central plot of both epics is embellished by a vast amount of digressive material that includes didactic and doctrinal lore on religion, morals, law and philosophy, as well as narrative tales, adventures, annecdotes, and fables." (The Princeton Encyclopedia)

হিরোয়িক action-এর ক্ষেত্রেও উভয় দেশের মহাকাব্য সাদৃশ্যযুক্ত মহাভারতের ভীম বা রামায়ণের হনুমান হোমারিক Hercules, Ajax Achilles-এর সঙ্গে সাদৃশ্য বর্তমান রাম সীতার কাহিনী ম্যানিউলাস হেলেনের সমতুল উভয় ক্ষেত্রেই যুদ্ধ হয়েছে মাটির উপর, কিন্তু স্বর্গের দেবতারা এই যুদ্ধে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছেন দেবতারাও মর্ত্যমানবের মতোই স্বার্থ, হিংসা প্রতিশোধস্পৃহায় জর্জরিত

(ii) Grandeur of thought চিন্তা বা মহত্বের উচ্চভাব বা বিশালতাহোমারের ইলিয়াড এবং ওডেসি-তে যেমন মহান আদর্শকে তুলে ধরা হয়েছে, প্রাচ্যের রামায়ণ মহাভারতেও সেই একই আদর্শের সুর প্রতিধ্বনিত এই আদর্শকে অবহেলা করার জন্যই যেমন ইলিয়াডের ট্রোজান ওয়্যার, রাম রাবণের যুদ্ধ বা কৌরব পান্ডবদের যুদ্ধেও সেই আদর্শের ব্যতয় ঘটেছে হোমার নিজেই বলেছেন যে

'Trojan war came about not merely because Paris had stolen Menelus' wife Helen, but because in doing so he had violated the sanctions of quest friendship."

ম্যানিউলাসের স্ত্রী হেলেনকে অপহরণ করাই ট্রয় যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ, কিন্তু এর মধ্যে যে আদর্শের নীতিকে লঙ্ঘন করা হয়েছে তা হল আতিথ্য ধর্ম অনুরূপে ওডেসি-তেও, "Penelop's suitors have violated the laws of hospitality and so odysseus is fully justified in dispensing justice and Killing them all." রামায়ণ মহাভারতে যে পারিবারিক তথা সামাজিক আদর্শবোধকে তুলে ধরা হয়েছে, রাবণ কৌরবেরা সেই আদর্শবোধকে লঙ্ঘন করেছে মহাকবি হোমার Achilles-এর তীব্র ক্রোধ, Agamemron-এর নারী অপহরণ, Patroclus হত্যার প্রতিশোধ নিতে হেক্টর হত্যার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তেমনই অপকৃষ্ট উদাহরণ উচ্চগ্রামে বর্ণিত হয়েছে মহাভারতে শকুনি, জরাসন্ধ-ভীম-অশ্বত্থামার মধ্যে পাণ্ডব বনবাস বা রামচন্দ্রের বনবাসের মধ্যে দুঃখ- কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা, হতাশা-বঞ্চনা চরম উৎকর্ষতা পেয়েছে মহাকবিদের বর্ণনায়

 

0 Reviews