ইন্দ্র ও বক মুনির উপাখ্যান

ইন্দ্র ও বক মুনির উপাখ্যান

Size

Read more

  ইন্দ্র ও বক মুনির উপাখ্যান

বনবাসকালে এক সময় পাণ্ডবনন্দন যুধিষ্ঠির মার্কণ্ডেয় ঋষিকে জিজ্ঞাসা করলেন— “ভগবন্ । শুনেছি মহাতপা বক ও ঋষি দালভ্য দীর্ঘায়ু ছিলেন। স্বয়ং ইন্দ্র নাকি তাঁদের সখা ছিলেন। সকলে তাঁদের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতেন। আমি তাঁদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। দয়া করে সেই বৃত্তান্ত শোনান। ”

মার্কণ্ডেয় বললেন- “হে ধর্মরাজ। দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে যে ভয়ংকর সংগ্রাম হয়েছিল তাতে দেবতারা শেষ পর্যন্ত জয়ী হন। ইন্দ্র দেবতাদের রাজা হন। তখন মেঘমণ্ডলী থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলো। প্রচুর পরিমাণে ফসল ফললো। প্রজাকুল অত্যন্ত খুশি। তারা নিরোগ ও সবল থেকে ধর্মাচরণে মনযোগী হলেন। জগতের সামগ্রিক মঙ্গল শুনে নিজের চোখে তা যাচাই করার লক্ষ্যে ঐরাবতে চড়ে দেবরাজ বেরিয়ে পড়লেন পরিভ্রমণে। নদ, নদী, পুষ্করিণী, জলাশয়, জনপদ, নানা রকমের আশ্রম ইত্যাদি দেখতে দেখতে তিনি এক সময় পৃথিবীতে অবতরণ করলেন। এরপর পূর্বদিকে সমুদ্র সন্নিহিত একটি মনোরম গাছ-গাছালি ঘেরা স্থান তাঁর নজরে এলো। সেখানে পাখির কুজন, হরিণের ইতস্তত বিচরণ সহ আকর্ষণীয় পরিবেশে তিনি একটি আশ্রম দেখলেন যা, মহাতপা বকের আশ্রম নামে পরিচিত। মহাতপা বক ইন্দ্রকে দেখে অত্যন্ত খুশি। তিনি দেবরাজকে পাদ্য, অর্থ, আসন, ফল-মূল ইত্যাদি দিয়ে যথাযোগ্য অভ্যর্থনা জানালেন।

বক মুনির আপ্যায়নে দেব পুরন্দর অত্যন্ত প্রীত হলেন। তিনি মহামুনিকে জিজ্ঞাসা করলেন- “হে ব্রাহ্মণ! আপনার পরমান্নু এক হাজার বছর। এই দীর্ঘ জীবনে আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন? বেশি দিন বাঁচলে কী কী দুঃখের বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয় ?”

বকমুনি বললেন- “হে ত্রিদশনাথ! জীবনের আয়ু যত দীর্ঘ হয়, মানব জীবনে তত বেশি অপ্রিয় বিষয় প্রত্যক্ষ করতে হয়। অনেক প্রিয়জনের বিয়োগ হৃদয় ভারাক্রান্ত করে তোলে। তেমনি অনেক অসৎ ব্যক্তির সংসর্গে আসতে হয়, যা মনকে কষ্ট দেয়।

পুত্র, জ্ঞাতিবন্ধু ও আরও অনেক নিকটজন চলে গেলে নিজেকে বড় অসহায় লাগে । যারা দরিদ্র, দীর্ঘ জীবন তাঁদের কাছে জগদ্দল পাথরের মতো, কারণ নির্ধনকে সকলেই দয়ার চোখে দেখে। করুণা করে। চিরজীবি হলে কুলীনের কুলক্ষয় এবং অকুলীনের কুললাভ হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীর দুর্বল হতে থাকে, তখন পর-নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়। জীবন তখন গতিহীন হয়ে পড়ে।

দেবরাজ! অকুলীনের কিভাবে কৌলিন্য বিপর্যয় হয় তা তো আপনি নিজেই দেখতে পাচ্ছেন। দেবতা, দানব, গন্ধর্ব, মানুষ, রাক্ষস এরা সকলেই বিপরীত স্বভাবের হয়ে যায়। সৎ ব্যক্তি অসৎ ব্যক্তির বশংবদ হয়ে পড়ে। এবং চরম মানসিক কষ্টের শিকার হয়। ধনবান ব্যক্তি হঠাৎ করে কর্মফলে পড়ে নির্ধন হয়ে পড়ে। জ্ঞানী পুরুষ অজ্ঞানের মতো আচরণ করে অনুতাপ করতে বাধ্য হয়। আবার নিতান্ত জ্ঞানহীন ব্যক্তিকেও কখনো কখনো পরম সুখে দিন কাটাতে দেখা যায়। এককথায় জীবন যত দীর্ঘ হয়, দুঃখের প্রকৃতি ও কারণও তত বিপরীতমুখী এবং অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে।” ইন্দ্ৰ বললেন— “হে মহাভাগ। এবার বলুন, চিরজীবি মানুষের সুখ কীভাবে আসে ?”

বক বললেন— “দেবরাজ! যে কারোর অধীনে না থেকে দিবসের অষ্টম বা দ্বাদশ ভাগে শুধুমাত্র শাক-ভাত খেয়েও তৃপ্তি পায়, সে-ই সুখী। যে ব্যক্তি দিবস গণনায় উদ্বিগ্ন নয়, সে সুখী। যে অন্যের গৃহে না থেকে নিজের পরিশ্রমে অর্জিত শাকান্ন পাক করে খায়, সে সুখী। আবার অন্যের বাড়িতে থেকে তিরস্কার বা লাঞ্ছনা সহ্য করে মিষ্টান্ন ভোজন করা যে মোটেই সুখের নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার যে ব্যক্তি, অতিথি-অভ্যাগত এবং পিতৃগণকে প্রদান করে সব শেষে অবশিষ্ট অন্ন ভোজন করে, সে সুখী। তবে যজ্ঞ-শেষ-অন্ন হলো শ্রেষ্ঠ এবং পবিত্র। তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন ভোজন হতেই পারে না ।

যে ব্যক্তি নিজ হাতে অতিথি সেবা করেন, তারপর নিজে অন্ন গ্রহণ করেন; সেই অন্নের যত গ্রাস অতিথি-ব্রাহ্মণ ভোজন করেন, তত হাজার গাভীদানের পুণ্য সেই দাতা ব্যক্তির প্রাপ্ত হয় । তিনি ইতিপূর্বে যত পাপ করেছেন, এই পুণ্যফলে তাঁর সমস্ত পাপ দূর হয়।”

এভাবে দেবরাজ মুনিবরের কাছ থেকে ঐ পর্বে অত্যন্ত উপযোগী কিছু পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন। তারপর মুনিবরের অনুমতি নিয়ে তিনি আশ্রম ত্যাগ করেছিলেন।


যারা বিশ্বাসের যোগ্য তাদের সঙ্গে কাজ করার সময় সতর্ক হয়েই কাজ করা উচিত। তাই গুপ্তচর ব্যবস্থা জোরদার করুন। তপস্বী, ভিক্ষুক, ভণ্ড ইত্যাদির বেশে বিশ্বাসী গুপ্তচর নিয়োগ করুন। বাগান, তীর্থক্ষেত্র, মন্দির, রাস্তাঘাট, পাহাড়, জঙ্গল এমন কি জনবহুল স্থানগুলিতেও গুপ্তচর নিয়োগ করা উচিত। গুপ্তচরদের নিয়ম করে স্থান পরিবর্তন করে দেওয়া দরকার, না হলে তারা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে না। কাজে অবহেলা দেখাবে।

নীতি নৈপুণ্যের লক্ষণ হলো বিনয়ী বাক্য প্রয়োগ, কঠিন কাজ করেও মুখে মিষ্টতা দেখানো এবং হৃদয়ে কঠোরতা বজায় রাখা। ঐশ্বর্য প্রাপ্তি বা সমর্থন পাওয়ার উপায়গুলি হলো— হাতজোড় করা, প্রতিজ্ঞা করা, আশ্বাস দেওয়া, পদধূলি নেওয়া এবং আশার বাণী শোনানো।

যে ব্যক্তি শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করে নিশ্চিন্তে বসে থাকে। তার যখন সর্বনাশ হবে, সেদিন তার ভুল ভাঙবে। সন্ধি করেও শত্রুর কার্যকলাপের উপর সদা সতর্ক থাকা উচিত। নিজের গোপন কথা ঘুণাক্ষরে কাউকে জানানো উচিত নয়, সে শত্রু বা বন্ধু যাই হোক না কেন। কাউকে যদি আশ্বাস বাক্য দিতে হয়, তবে তা যেন দীর্ঘকালীন হয়। আশ্বাসবাক্য স্বল্পকালীন সময়ের হলে হিতে বিপরীত হয়। পাণ্ডুপুত্ররা অধিক বলশালী। আপনি এমন কিছু করুন যাতে ওদের থেকে ভয় পাবার মতো কোন কিছু যেন না থাকে। না হলে পরে আপনাকে অনুতাপ করতে হবে।”

এর বেশি আমার আর কিছু বলার নেই মহারাজ। এই বলে কণিক ধৃতরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ধৃতরাষ্ট্র তখন গভীর চিন্তায় বিভোর।

দ্রৌপদী এবং যুধিষ্ঠিরের কথোপকথন— নিষ্কাম কর্মের তাৎপর্য

মহাভরতের বন পর্বে ত্রিশ এবং একত্রিশ অধ্যায়ে দ্রৌপদী এবং যুধিষ্ঠিরের মধ্যে নিষ্কাম কর্ম এবং তার তাৎপর্য নিয়ে একটি মনোগ্রাহী আলোচনা আছে। শুরুতে রৌপানী ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে বললেন- “হে নাথ। কর্মের দ্বারা উত্তম বা মধ্যম আলানা আলানা লোকপ্রাপ্তি হয়, কর্মের ফল অবশ্যস্তাবী। কর্ম না করে দয়া, সত্য, ক্ষমা, ধর্ম, সারল্য ইত্যাদি দিয়ে ইহলোকে সমৃদ্ধি লাভ করা যায় না। মহারাজ! আপনি এবং আপনার ভায়েরা এতদিন রাজ্য শাসন বলুন কিংবা এই নির্বাসন কালে, ধর্মকেই আঁকড়ে রয়েছেন। আপনাদের জীবনে ধর্মের চেয়ে অধিক প্রিয় কিছুই নেই। আমি দেখেছি আপনার রাজ্য ও জীবন উভয়ই ধর্মের নিমিত্ত। আমি বিলক্ষণ জানি যে, আপনি ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব এমন কি আমাকেও ত্যাগ দিতে পারেন। কিন্তু ধর্মকে কখনো পরিত্যাগ করবেন না। আমি প্রবীণদের কাছে শুনেছি রাজা ধর্মকে রক্ষা করেন। আবার ধর্মও রাজাকে রক্ষা করে। এখন দেখছি আপনি এতখানি ধর্মপ্রাণ হওয়া সত্ত্বেও ধর্ম কিন্তু মোটেই আপানাকে রক্ষা করছেন না। ধর্ম আপনার যথার্থ রক্ষক নন।

এত বড় রাজ্যের রাজা হয়েও আপনি ছোট, বড়, সম-মর্যাদার কাউকে কখনো অসম্মান করেন নি। আপনার মধ্যে অহংকার বা অভিমান কখনোই কারো চোখে পড়েনি। আপনার দৃষ্টিতে দেবতাদের জন্য 'স্বাহা” এবং পিতৃগণের জন্য 'স্বধা" চিরকাল ধ্বনিত হয়ে আসছে। ব্রাহ্মণ, ভিক্ষু, সন্ন্যাসী, গৃহস্থ, অতিথি সবাইকে আপনি সোনার পাত্রে ভোজন করাতেন। আমি নিজে তাঁদের পরিবেশন করতাম। আপনার দিক থেকে ব্রাহ্মণদের জন্য কোনো কিছুই অদের ছিল না। অতিথি ও অন্যান্য সকল প্রাণীদের আপনি “বৈশ্যদেব বলি' প্রদান করে তৃপ্তি লাভ করতেন। তারপর নিজে অম্ল গ্রহণ করতেন। আপনি অশ্বমেধ, গোমেধ, রাজসূর, পুণ্ডরীক প্রভৃতি যজ্ঞ করে প্রতিনিয়ত ইষ্টসাধন করতেন। তারপর আপনার হঠাৎ এমন বিপরীত বৃদ্ধি হলো যে, আপনি



শত্রু যদি আত্মসমর্পণও করে তাতে বিগলিত হওয়ার কিছু নেই। শত্রু, শত্রুই; তাকে বিনাশ করাই রাজার প্রধান লক্ষ্য। আসল কথা হলো শত্রু নিধনে কোনো ত্রুটি রাখতে নেই। প্রথমে তাকে সমূলে যাতে ধ্বংস করা যায়, সেভাবে প্রয়াসী হওয়া উচিত। পরে তার সহায় ও সহযোগিদের বিনাশ করা উচিত।

রাজার উচিত নিজের দুর্বল বিষয়গুলিকে সম্পূর্ণ গোপন রাখা। এবং প্রতিপক্ষের ছিদ্রগুলিকে নিজের গোচরে আনা। সাধারণত শত্রুর তিনটি শক্তি (মন্ত্র, বল ও উৎসাহ) পাঁচটি সহযোগি (সহায়, সহায়ক, উপায়, দেশ এবং কালের বিভাগ) এবং সাতটি অঙ্গকে (সাম, দান, ভেদ, দণ্ড, মায়া, ইন্দ্রজাল প্রয়োগ এবং শত্রুর গুপ্ত কাজ) নষ্ট করতে হয়। শত্রুকে আক্রমণ করার ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । যতক্ষণ না সময় অনুকূল হচ্ছে ততক্ষণ প্রয়োজন হলে শত্রুকে কাঁধে করেও বেড়ানো যেতে পারে। কিন্তু উপযুক্ত সময় যখন আসবে তাকে মাটির কলসির মতো আছড়ে ভেঙে ফেলা উচিত। এছাড়া সন্ধি, দান, ভেদ ও দণ্ড দ্বারাও শত্রুকে সংহার করা যায়। ধৃতরাষ্ট্র বললেন— “কণিক, সন্ধি, দান, ভেদ বা দণ্ড দ্বারা কীভাবে শত্রুকে ঘায়েল করা যায়, তা সবিস্তারে পরিবেশন করো।”

কণিক বললেন- “মহারাজ! আমি এই বিষয়ে একটি গল্পের মাধ্যমে আপনার সামনে আমার কথাগুলি তুলে ধরছি।”

মহারাজ এক বনে একজন খুব বুদ্ধিমান ও স্বার্থপর এক শৃগাল বাস করতো। তার চারজন বন্ধু ছিল যথাক্রমে বাঘ, ইঁদুর, ভেড়া ও নেউল। একদিন তারা জঙ্গলে একটি মোটাসোটা হরিণ দেখতে পেল। প্রথমে তারা সবাই মিলে হরিণটিকে ধরার চেষ্টা

করলো। কিন্তু পারল না। ব্যর্থ হলো। তখন শিয়াল বলল- “হরিণটা বেশ চালাক এবং জোরে ছুটতে পারে। ভাই বাঘ, তুমি আপ্রাণ চেষ্টা করলে। কিন্তু হরিণটাকে বাগে আনতে পারলে না, তাই আমি বলি কি, হরিণটা যখন ঘুমাবে, সেই সময় ইঁদুর গিয়ে তার পা কামড়ে ক্ষত করে দেবে। তখন তুমি তাকে ধরে ফেলবে। তারপর সবাই মিলে মহানন্দে আমরা হরিণটিকে বারো।” তা শুনে সবাই বলল- “বেশ,

এরপর হরিণ মাত্রা তেল। শিবাল তখন সবাইকে বলল, যাও তোমরা স্নান করে এসে, ততক্ষণ আমি একে পাহারা দিচ্ছি। একটু পরে বাস নদীতে স্নান সেরে ফিরে আসেন। শিলাকে কখন যেন কেমন চিহ্নিত পাগছে। তা দেশে বাস বললো- “ভাই কি কি করে আমরা সবাই হরিণটাকে পেয়ে

শিয়াল বলল- “ইদুর আমাকে বলেছে, বাঘের কি এমন শক্তি। আমি হরিণটাকে মারলাম, আর সে আমার কষ্টের শিকারটা খাবে। তাই আমার এই হরিণ খেতে ইচ্ছে

করছে না।”

শিকার করবো। এই বলে বাঘ বনে চলে গেল।” বাঘ বলল- “ও তাই! ও তো আমার চোখ খুলে দিল। আমি এরপর একাই

এরপর ইঁদুর এলো। শিয়াল বললো, ইঁদুর ভাই, নেউল বলছে যে, বাঘ হরিণকে মারায় সেই মাংসে বিষ মিশে গেছে। তাই সে খাবে না। সে নাকি তোমাকেই খাবে। এখন ভাবো, তুমি কি করবে ? এই শুনে ইঁদুর ভয় পেয়ে গর্তে ঢুকে গেল ।

এরপর ভেড়া এলো। শিয়াল বললো- “ভাই ভেড়া! বাঘ আজ তোমার উপর বেজায় খাপ্পা । তার মতলব আমার মোটেই ভালো লাগছে না। শুনছি সে নাকি এক্ষুণি বাঘিনীকে নিয়ে আসছে। এখন চিন্তা করো তুমি কি করবে ? ভেড়া এই কথা শুনে একমুহূর্ত আর অপেক্ষা করলো না। দৌড়ে উধাও হয়ে গেল।”

সবশেষে এলো নেউল। তাকে দেখেই শিয়াল বললো, দেখ নেউল আমি ইতিমধ্যে বাঘ, ভেড়া আর ইঁদুরকে মেরে ফেলেছি এখন তোর মরার পালা। আয় তোকে মেরে

আমি হরিণকে খাই। নেউল বলল, সবাইকে যখন তুমি মেরে ফেলছো, আমি আর লড়ি ? আমি চললাম।”

বলাবাহুল্য, এরপর শিয়াল একাই হরিণের পুরো মাংস খেল।

কণিক পুনরায় বললেন- “রাজন! বুদ্ধিমান রাজাদের ক্ষেত্রে এই কথাই প্রযোজ্য। যারা ভীরু তাদের ভয় দেখাও। যারা সাহসী বা বলশালী তাদের অনুনয় বিনয়

করে বশে আনো।

যারা লোভী তাদের কিছু হাতে দিয়ে দাও আর দুর্বলদের পরাক্রম দেখিয়ে তার উপর বিজয় হাসিল করো।

আসল কথা হলো, শত্রুকে নির্মূল করতে হবে। তার জন্য অর্থের লোভ দেখিয়ে, কিংবা বিষ খাইয়ে, নয় তো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে শত্রুকে শেষ করে দেওয়া উচিত।

কাউকে মেরে ফেলার ইচ্ছা থাকলেও মিষ্টি কথা বলবে। মেরে কৃপা করবে, আফসোস করবে এবং কাঁদবে। শত্রুকে কোনো কিছুই বুঝতে দেবে না। কিন্তু সুযোগ পেলেই মেরে ফেলবে। সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে সে নির্দোষ, কিন্তু সেও সন্দেহ মুক্ত নয়।

0 Reviews